দেরিতে আসায় মন্তব্য, শিক্ষকের রোষানলে ৩৩ শিক্ষার্থী

জয়পুরহাটের কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির ৩৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে দেরিতে আসা নিয়ে শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করায় অভিযুক্ত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে তাদের মারধর করেন। এই ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে।

শিক্ষকের বেত্রাঘাতে কয়েকজন ছাত্রের পিঠ ও হাতে জখম হয় এবং তারা কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ জন মিলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন শিক্ষক নাফসি তালুকদার নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পর সপ্তম শ্রেণির একটি ক্লাসে যাচ্ছিলেন। এসময় নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে দেখে মন্তব্য করে, ‘এই স্যার কখনও সময়মতো ক্লাসে যান না। আজকেও স্যার আধা ঘণ্টা দেরি করে আসছেন’। এই মন্তব্য কানে আসতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে নবম শ্রেণির কক্ষে প্রবেশ করেন এবং মন্তব্যটি কে করেছে তা জানতে চান। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে তিনি উপস্থিত ৩৩ জনকেই বেত দিয়ে মারধর করেন।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহানের নির্দেশে অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও জানান, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ ছিল। আমরা চেষ্টা করব দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার, যা সবার জন্য একটি নজির হয়ে থাকবে’। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বকুল জানান, তিন কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব চাওয়া হয়েছে এবং জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার নিজের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার হার্টের সমস্যাসহ শারীরিক কিছু রোগ রয়েছে। সকালে শরীর খারাপ লাগায় প্রেশার মেপে স্কুলে যেতে দেরি হয়েছে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাজে মন্তব্য করায় আমি প্রত্যেককে দুটি করে মেরেছি, এলোপাথারি মারধর করিনি’।

এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আকিব হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর বাবা কালাম বলেন, ‘শিক্ষক দেরি করে আসবেন, আবার তার জেরে শিক্ষার্থীদের মারধর করবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই’।