বিভক্তির পথে সুদান? হেমেত্তির নতুন সরকারে ঘনীভূত হচ্ছে সংকট

সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো একটি সমান্তরাল সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন। শনিবার (৩০ আগস্ট) আরএসএফ এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে কার্যত বিভক্ত হওয়ার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিলো।

‘হেমেত্তি’ নামে বেশি পরিচিত মোহাম্মদ হামদান দাগালোকে গত ২৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধের শুরু থেকে সুদানে খুব কমই দেখা গেছে। আরএসএফের বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনি সুদানের নিয়ালা শহরে শপথ গ্রহণ করেছেন। দারফুর অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ এই শহরটি বর্তমানে আরএসএফের কার্যত রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে হেমেত্তির নেতৃত্বে একটি সভাপতি পরিষদ ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে। শনিবার এই শহরকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়।

এদিকে সুদানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উত্তর করদোফান রাজ্যে আরএসএফের চালানো এক ড্রোন হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন কিশোরীও রয়েছে। ইন্দ্রাবা এলাকার আউলাদ আল-শরীফ গ্রামে রাতের ওই হামলায় আরও ছয়জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী এই ঘটনাকে আরএসএফের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো ধারাবাহিক নৃশংসতা ও যুদ্ধাপরাধের অংশ বলে উল্লেখ করেছে।

বর্তমানে আরএসএফ দারফুরের大部分 অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ঐতিহাসিক শহর আল ফাশের দখলের জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের তীব্র লড়াই চলছে। তারা শহরটি ৫০০ দিনের বেশি সময় ধরে অবরোধ করে রাখায় সেখানে লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ আটকা পড়েছে। তীব্র খাদ্য সংকটের কারণে সেখানকার মানুষ এখন পশুখাদ্য খেয়ে বেঁচে আছেন বলে জানা গেছে।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ গত সপ্তাহে জানিয়েছে, চলমান সংঘর্ষে এক হাজারের বেশি শিশু বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও স্থল লড়াইয়ে নিহত বা পঙ্গু হয়েছে। অন্যদিকে ইয়েল হিউম্যানিটারিয়ান ল্যাব জানিয়েছে, উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, আরএসএফ শহরের বাইরে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে যাতে সাধারণ মানুষ পালিয়ে যেতে না পারে। যারা পালাতে পেরেছেন, তাদের অনেকেই আরএসএফ সদস্যদের হাতে লুটপাট ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অপরদিকে, সুদানের সেনাবাহিনী দেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং সম্প্রতি তারা প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠক করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর এটিই সেনা-সমর্থিত সরকারের প্রথম আনুষ্ঠানিক কাঠামো। করদোফান অঞ্চলটি বর্তমানে দুই বাহিনীরสู้รบ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে ছোট ছোট গ্রামগুলো নিয়মিত হামলার শিকার হচ্ছে। এই গৃহযুদ্ধ সুদানের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অনাহারের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে এবং বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।