আগ্রাসী পোকা দমনে নতুন অস্ত্র, গন্ধ শুঁকে ডিম খুঁজবে কুকুর

আগ্রাসী কীটপতঙ্গের বিস্তার রোধ করে প্রকৃতিকে বাঁচাতে এবার মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু কুকুরকে কাজে লাগানোর অভিনব এক পদ্ধতি বের করেছেন গবেষকরা। ভার্জিনিয়া টেকের এক গবেষণায় প্রথমবারের মতো দেখা গেছে, পোষা কুকুর ‘স্পটেড ল্যান্টার্নফ্লাই’ বা দাগযুক্ত লণ্ঠন পোকা নামে পরিচিত এক ধরনের ক্ষতিকর পতঙ্গের দ্রুত বংশবিস্তার ঠেকাতে পারে।

দাগযুক্ত লণ্ঠন পোকারা বিভিন্ন গাছের রস খেয়ে বেঁচে থাকে এবং ‘মধুরস’ জাতীয় এক ধরনের মিষ্টি পদার্থ নিঃসরণ করে, যা গাছের ওপর ছত্রাক জন্মাতে সাহায্য করে। এই পোকারা এতটাই ধ্বংসাত্মক যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এদের দেখামাত্র পিষে ফেলার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পোকা নির্মূলের আসল উপায় হলো এদের ডিমের গুচ্ছ ধ্বংস করা। কিন্তু শুকনো কাদার মতো দেখতে হওয়ায় গাছের ছাল বা অন্যান্য স্থানের সঙ্গে এমনভাবে মিশে থাকে যে খালি চোখে এদের ডিম খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

তবে এই কঠিন কাজটি সহজ করে দিতে পারে কুকুর। তাদের শক্তিশালী ঘ্রাণশক্তিই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কেটি থমাস বলেন, ‘কুকুরদের প্রধান ইন্দ্রিয় হলো তাদের নাক। আমরা যেমন চোখের ওপর নির্ভর করি, কুকুররা তেমনি তাদের নাককে চোখের মতো ব্যবহার করে।’

কেটি থমাস এবং তার নয় বছর বয়সী মিশ্র পিটবুল প্রজাতির কুকুর ‘ফিঞ্চ’ এই গবেষণায় অংশ নেয়। তারা দীর্ঘদিনের ঘ্রাণ শনাক্তকরণের দক্ষতাকে ভালো কোনো কাজে লাগানোর আশা নিয়ে এতে যোগ দেন। বদ্ধ ঘরে এবং বাইরে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ফিঞ্চকে লণ্ঠন পোকার ডিমের গুচ্ছ শনাক্ত করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সঠিক স্থানটি খুঁজে পেলেই তাকে পুরস্কৃত করা হতো।

থমাস বলেন, ‘আমরা এমনিতেই নিজেদের আনন্দের জন্য কুকুরকে বিভিন্ন জিনিসের গন্ধ চেনার প্রশিক্ষণ দিই। সেই দক্ষতাকে যখন সমাজের কোনো বাস্তব সমস্যা সমাধানের কাজে লাগানো যায়, তখন তা সত্যিই খুব পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয়।’

দাগযুক্ত লণ্ঠন পোকার মূল আবাস এশিয়ায়। প্রায় এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রথম এদের শনাক্ত করা হয়। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯টি রাজ্যে এই পোকা ছড়িয়ে পড়েছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া আরেকজন, ক্যারোলিন শেলবোর্ন বলেন, ‘এই পোকাগুলো এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং আমাদের এদের ডিম খুঁজে বের করতে হবে। কারণ পূর্ণবয়স্ক পোকা ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়’।

ক্যারোলিন এবং তার নয় বছর বয়সী ‘বর্ডার কলি’ প্রজাতির কুকুর ‘হার্মিস’ ছিল প্রথম পাঁচটি দলের মধ্যে অন্যতম, যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মোট ১৮২টি স্বেচ্ছাসেবী দল অংশ নিয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরের ভেতরে কুকুররা ৮০ শতাংশের বেশি নির্ভুলভাবে লণ্ঠন পোকার ডিমের গন্ধ শনাক্ত করতে পেরেছে। বাস্তবসম্মত পরিবেশে, অর্থাৎ বাইরের পরিবেশে এই সাফল্যের হার ছিল ৬০ শতাংশের বেশি, যা মানুষের অনুসন্ধানের চেয়ে অনেক উন্নত।

শেলবোর্ন আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আশা করি আরও বেশি মানুষ দেখবেন যে যেকোনো কুকুরকেই এই প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে কুকুরের সঙ্গে মজার সময়ও কাটানো যায়’।

গবেষকরা মনে করছেন, স্থানীয় পরিবেশ রক্ষায় কুকুরদের ব্যবহারের এটি কেবল শুরু। যেসব অঞ্চলে দাগযুক্ত লণ্ঠন পোকার সমস্যা নেই, সেখানেও অন্যান্য আগ্রাসী প্রজাতি শনাক্ত করার জন্য কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।