আপনি পড়ছেন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার একটি ‘বোঝাপড়া’ হয়েছে। গত মাসে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তারা এই বোঝাপড়ায় পৌঁছান। চীনে আয়োজিত এক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় পুতিন এই মন্তব্য করেন। তবে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হবেন কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। এর আগে ট্রাম্প পুতিনকে আলোচনার বিষয়ে সাড়া দেওয়ার জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে আবারও সাফাই গেয়েছেন। তিনি এই যুদ্ধের জন্য আগের মতোই পশ্চিমা বিশ্বকে দায়ী করেন।

আলাস্কায় বৈঠকের পর মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যৎ শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে পুতিন সম্মত হয়েছেন। যদিও মস্কো এখনও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

পুতিন চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন, যেখানে তিনি শি জিনপিং এবং নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ‘ইউক্রেন সংকট সমাধানে সহায়তা’ করার জন্য চীন ও ভারতের নেতাদের তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। চীন ও ভারত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এ কারণে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের সমালোচনা করে বলেছে যে, দেশ দুটি যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত রুশ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখছে।

বক্তৃতায় পুতিন আরও বলেন, আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ‘যে বোঝাপড়া হয়েছে’, তা ‘আশা করি, ইউক্রেনে শান্তির পথ খুলে দেবে’। একইসঙ্গে তিনি তার পুরোনো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই সংকট ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে শুরু হয়নি, বরং এটি ইউক্রেনে একটি অভ্যুত্থানের ফল, যাকে পশ্চিমারা সমর্থন ও উসকানি দিয়েছিল’। তিনি এই যুদ্ধের জন্য ‘ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের ক্রমাগত চেষ্টাকেও’ দায়ী করেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট বরাবরই ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার ধারণার বিরোধিতা করে আসছেন। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পুতিন ক্রিমিয়া দখল করেন এবং রুশ-সমর্থিত বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনের একটি অংশ দখল করে নেয়। এর কয়েক বছর পর, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পুতিন ইউক্রেনে পুরোদস্তুর সামরিক আগ্রাসনের নির্দেশ দেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান হামলার কয়েকদিন পর পুতিনের এই মন্তব্য এলো। শুক্রবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গে শান্তি আলোচনায় সম্মত হওয়ার জন্য ট্রাম্প পুতিনকে সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, রুশ নেতা যদি এতে রাজি না হন, ‘তাহলে এটা আবারও প্রমাণ করবে যে প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে খেলেছেন’।

তবে ২২ আগস্ট সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পুতিনকে জবাব দেওয়ার জন্য ‘আরও কয়েক সপ্তাহ’ সময় দেবেন। রুশ নেতাকে দেওয়া একাধিক চরমপত্র ও সময়সীমার মধ্যে এটি ছিল সর্বশেষ।

ট্রাম্প এর আগে দাবি করেছিলেন যে তিনি একদিনের মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধান করতে পারেন। গত মাসে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে সরে এসে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির আহ্বান জানান। তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি সফরে আসা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেন।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ‘ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দেওয়া হবে না’। তবে তিনি নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ইউরোপ হলো ‘প্রতিরক্ষার প্রথম স্তর’ এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে সম্পৃক্ত থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ভালো সুরক্ষা দেবো’, যদিও তিনি স্পষ্ট করে দেন যে এর অর্থ ইউক্রেনে মার্কিন সেনা পাঠানো হবে না।

প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও সিএনএন-কে জানান যে পুতিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেন, এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ‘কার্যত ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো ভাষা ব্যবহার করে একটি নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাব দেবে’। ন্যাটোর এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সদস্য রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে।

জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি আশা করছেন চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নিরাপত্তা নিশ্চয়তার একটি রূপরেখা লিখিত আকারে প্রস্তুত হবে। তবে গত শুক্রবার রাশিয়া পশ্চিমা প্রস্তাবগুলোকে ‘একপাক্ষিক এবং রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত’ বলে সমালোচনা করে।

এদিকে রাশিয়ার হামলাও অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মস্কো কিয়েভে ৬২৯টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এক বর্বরোচিত হামলা চালায়। যুদ্ধের অন্যতম এই বৃহৎ বিমান হামলায় ২৩ জন নিহত হন, যা ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। এরপর থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি চুক্তিতে রাজি করাতে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির অঙ্গীকার করেছেন।

অন্যদিকে, জেলেনস্কি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে একটি বেসামরিকীকৃত অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি রাশিয়াকে কূটনীতির জন্য প্রস্তুত নয় বলে অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে তারা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার উপায় খুঁজছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.