ইরানি মুদ্রার ভয়াবহ পতন, ডলার ছাড়াল ১০ লাখ রিয়াল

ইউরোপীয় শক্তিগুলো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পক্ষে চাপ সৃষ্টি করায় এবং ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কায় ইরানের মুদ্রা আবারও ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দেশটির খোলা বাজারে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১০ লাখ ৬০ হাজার রিয়াল ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশটির মুদ্রার ইতিহাসে একটি নতুন সর্বনিম্ন রেকর্ড।

ইরান সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, জাতীয় মুদ্রার এই তীব্র অবমূল্যায়ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পতনের কারণে নয়, বরং এটি চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া।

ইরানে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার ৩৫ শতাংশের বেশি, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হলে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং তেলসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির আওতায় প্রত্যাহার করা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। চুক্তির একটি ধারা অনুযায়ী, কোনো পক্ষ ‘স্ন্যাপব্যাক’ সক্রিয় করলে পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। ইউরোপীয় মিত্ররা এ ব্যাপারে শর্ত মেনে সিদ্ধান্ত জানাতে ইরানকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করা, জাতিসংঘের পরিদর্শকদের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া এবং ইরানের কাছে থাকা ৪০৮.৬ কেজি উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দেওয়া।

তবে ইরান বলছে, পশ্চিমা মিত্রদের দাবি করা শর্তগুলো আলোচনার ফলাফল হওয়া উচিত, সূচনা নয়। ইরানের মতে, ইউরোপীয় শক্তিগুলোর এই ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া শুরু করার কোনো আইনি ভিত্তি নেই, কারণ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার বলেছেন, ‘ইউরোপীয় শক্তিগুলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মিশনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে এবং এটিকে বিশ্ব নিরাপত্তার অভিভাবকের পরিবর্তে জবরদস্তির হাতিয়ারে পরিণত করছে’। এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সামনে জরুরি কাজ হলো আন্তর্জাতিক আইন পুনরুদ্ধার করা এবং এর ওপর ভিত্তি করে কূটনীতির সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি তৈরি করা’।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ইরানের ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। পরে জো বাইডেন এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি আরও সম্প্রসারিত করা হয়। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইরান ধীরে ধীরে তার পারমাণবিক কর্মসূচি বাড়িয়েছে এবং বর্তমানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধতার খুব কাছাকাছি।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সম্প্রতি ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি প্রতিস্থাপন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে অন্যান্য কেন্দ্র পরিদর্শনের অনুমতি চাইলেও তেহরান তাতে সম্মতি দেয়নি। তেহরানের অভিযোগ, আইএইএ পশ্চিমা শক্তিগুলোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এদিকে, ইরানের পার্লামেন্টে একটি আইন পাস করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হলে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে এবং আইএইএর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দেবে।