হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ না পেয়ে পোলিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ, সম্পর্কে টানাপোড়েনের ইঙ্গিত

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, তিনি কারও সঙ্গে নতজানু হয়ে কথা বলবেন না। ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পোলিশ প্রেসিডেন্ট ক্যারল নাভরোকির বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্যারিসে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান। এই ঘটনায় পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন-পন্থী জোট সরকার এবং বিরোধী দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস’ (পিআইএস) সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ক্যারল নাভরোকির মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লাভ সিকোরস্কি এবং প্রেসিডেন্ট নাভরোকির প্রকাশ্য বিবাদ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। সম্প্রতি সিকোরস্কি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ফ্লোরিডায় সাক্ষাৎ করেন, যা দুই শিবিরের সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি করেছে।

বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউস সফর করেন প্রেসিডেন্ট নাভরোকি। বৈঠক শেষে নাভরোকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চলমান মস্কো-কিয়েভ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একমাত্র ট্রাম্পই আলোচনার সক্ষমতা রাখেন’। তিনি আরও জানান, রাশিয়া প্রসঙ্গে তার মতামতের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগী ছিলেন। ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে নাভরোকির সহযোগীরা জানান, পোলিশ প্রধানমন্ত্রী টাস্ককে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার প্যারিসে ‘ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট’ এর বৈঠক শেষে এই বিষয়ে জানতে চাইলে টাস্ক বলেন, ‘আমার একটি নীতি আছে এবং আমি তা মেনে চলার চেষ্টা করি। সেটি হলো, পোলিশরা পোলিশদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক কোনো দায়িত্বে থাকাকালীন, খারাপ কথা বলে না’। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভালোভাবেই জানি, আমি কত বড় দানব, তা আমাদের মার্কিন অংশীদারদের বোঝানোর জন্য পিআইএসের কত নেতা ওয়াশিংটনে তদবির করতে গিয়েছেন। সম্ভবত এর কিছু প্রভাব পড়েছে’।

তবে টাস্ক জানান, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনে তিনি সমর্থন দিতে প্রস্তুত। তার কথায়, ‘প্রেসিডেন্ট যে-ই হোন না কেন, আমরা তার দায়িত্বে সমর্থন দিতে সর্বদা প্রস্তুত। তবে সত্যি বলতে, ওই পক্ষে সহযোগিতার কোনো ইচ্ছা আপাতত নেই’। তিনি বলেন, ‘সম্পর্কটি মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের সঙ্গে হোক, পোল্যান্ডকে সর্বদা মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে হবে। আমি আমার পথ বদলাব না। আমি কারও সঙ্গে নতজানু হয়ে কথা বলব না’।

প্যারিসের বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে টাস্ক জানান, কীভাবে একে বাস্তবসম্মত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পোল্যান্ড ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা করছে না, তবে আমরা রসদ সরবরাহের দায়িত্বে আছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধের অবসান চান, কিন্তু কোনো ফল আসছে না; মনে হচ্ছে রাশিয়া সময়ক্ষেপণ করছে’।

রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা সীমিত করা এবং দেশটির জোট নিরপেক্ষ অবস্থান চাইছে। অন্যদিকে, কিয়েভ জানিয়েছে, শান্তির জন্য তারা কোনো ভূখণ্ড ছাড়বে না। বর্তমানে পোল্যান্ডে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে। বুধবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি পোল্যান্ড থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করবেন না।

চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ প্রদর্শনী’ হিসেবে উল্লেখ করে টাস্ক বলেন, ‘এই পশ্চিম-বিরোধী প্রদর্শনীতে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতি কিছুটা উদ্বেগজনক ছিল’।

উল্লেখ্য, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনসহ একাধিক বিদেশি নেতাকে স্বাগত জানান।