ইসরায়েলি হুমকি উপেক্ষা করে গাজার পথে শত জাহাজের নৌবহর

ইসরায়েলের হুমকি উপেক্ষা করে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রায় ১০০টি জাহাজের নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ তিউনিসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ নিয়ে স্পেনের মেনর্কা থেকে যাত্রা শুরু করে নৌবহরটি। শুক্রবার ফ্লোটিলার আয়োজকরা এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আয়োজকরা জানান, গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙা, মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এই যাত্রার মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে নৌবহরের বেশিরভাগ জাহাজ তিউনিসের পথে রয়েছে। ঝড়ের কারণে বার্সেলোনায় মেরামতের জন্য থেমে থাকা দুটি জাহাজসহ আরও কয়েকটি নৌযান দ্রুতই বহরে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আগামী রোববার সিসিলির কাতানিয়া এবং তিউনিস বন্দর থেকে আরও কয়েক ডজন জাহাজ মূল বহরের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আয়োজকরা এই পদক্ষেপকে ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে ‘একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এই নৌবহরটি বিশ্বের অন্তত ৪৪টি দেশের আইনপ্রণেতা, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। এসব সংস্থার শতাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা গাজায় একটি মানবিক করিডোর তৈরি, বেসামরিক মিশনের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়নের জন্য জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে একটি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি অধিকৃত অঞ্চল বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ জানিয়েছেন, এই মিশনটি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এই উদ্যোগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা সবচেয়ে কঠিন এবং বিপজ্জনক পথ বেছে নিয়েছেন: নৃশংস সহিংসতার মুখে পদক্ষেপের পথ। এই তীর থেকে আমরা আপনাদের শক্তি, কথা ও জীবন পাঠাচ্ছি।’ এছাড়া, ইতালির জেনোয়া বন্দরের ডককর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ফ্লোটিলার যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টি করা হলে তারা ইসরায়েলে সব ধরনের চালান পাঠানো বন্ধ করে দেবেন।

আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আহ্বান

আয়োজকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রতি ফ্লোটিলার নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা অংশগ্রহণকারীদের অবৈধ আটক থেকে রক্ষা এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সমুদ্রপথের অধিকার নিশ্চিত করারও দাবি জানান। গাজার ওপর থেকে ইসরায়েলি অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা একে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আয়োজকরা আরও জানান, এই নৌবহর কোনো সরকার বা করপোরেট সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাধারণ পরিবার, সম্প্রদায় ও তৃণমূল সংগঠনগুলোর দানের মাধ্যমে এর কার্যক্রম চলছে। ফ্লোটিলার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের এই জোটে চিকিৎসক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, শিল্পী ও সাধারণ মানুষ রয়েছেন, যারা বিশ্বাস করেন যে ফিলিস্তিনিরাও মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং মানবিকতার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকারী।’

এদিকে, শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ৭০০তম দিনে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।