ফটিকছড়িতে বালু উত্তোলন: নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ২০০ বছরের পুরোনো কবরস্থান

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ধুরুং নদীর তীব্র ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি পারিবারিক কবরস্থান। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের এই কবরস্থানে খ্যাতিমান আলেম মাওলানা রহমত উল্লাহর (শা.) বংশধরসহ একাধিক প্রজন্মের মানুষ শায়িত আছেন। চোখের সামনে পূর্বপুরুষদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন নদীতে বিলীন হতে দেখে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। পয়ষট্টি বছর বয়সী শফিউল আজম আক্ষেপ করে বলেন, ‘ওরা যত্রতত্র ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে। এখন কবরটা পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।’ আরেক বাসিন্দা রফিকুল আলমের কথায়ও ঝরে পড়ে অসহায়ত্ব। তিনি জানান, দাদা-পরদাদাদের কবর হারিয়ে যেতে দেখা তাদের জন্য অসহনীয় কষ্টের।

ভাঙনের কবলে শুধু চরপাড়ার কবরস্থানই নয়, একই ইউনিয়নের পল্লানপাড়ার আরেকটি প্রাচীন কবরস্থানও হারিয়ে যাওয়ার পথে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ধুরুং খালের অন্তত চারটি পয়েন্টে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এর ফলে নদীর স্রোত বেড়ে গিয়ে ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কবরস্থানের পাশাপাশি বহু মানুষের ফসলি জমি ও বসতভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বালু উত্তোলন এখনো বন্ধ হয়নি।

এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং ড্রেজার নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলামও জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর তারা পেয়েছেন এবং শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। তিনি এই কবরস্থানকে এলাকার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভাঙন বাড়ছে। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সোহাগ তালুকদার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। অন্যদিকে, হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন নদীর প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি।

অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দৌরাত্ম্যে একটি জনপদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মানুষের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকুও আজ হুমকির মুখে। যদিও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, তবে স্থানীয়রা তাদের পূর্বপুরুষের কবর ও বসতভিটা রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন।