জাকসু নির্বাচন: ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ভোট বন্ধ, তাজউদ্দীন হলে স্থগিত ১ ঘণ্টা

৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে দুপুর নাগাদ ভোটকেন্দ্রগুলোতে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ওঠায় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয় এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভোটগ্রহণ এক ঘণ্টা স্থগিত থাকে।

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ঘটছে এবং সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকরা হলের প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হন। এ সময় সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা হলে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এর আগে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। অভিযোগ ওঠে, প্রাথমিক ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় কার ভোট পড়ছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ছবি-সংবলিত ভোটার তালিকা আসার পর ভোটগ্রহণ পুনরায় শুরু হয়।

হল প্রভোস্ট লুতফুল ইলাহী বলেন, নতুন ছবি-সংবলিত তালিকা এসেছে। যারা আগে ভোট দিয়েছেন, তারা তাতে স্বাক্ষর করেছেন। কেউ যদি পুনরায় ভোট দিতে আসে, আমরা শনাক্ত করতে পারব।

তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ছবিবিহীন তালিকা দিয়ে ১৫৯ জনের ভোট ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে, যা অনিয়মের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, অতিরিক্ত ব্যালট সরবরাহ, ডোপ টেস্টের ফলাফল প্রকাশ না করা এবং প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

শিবির-সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব অভিযোগ করে করে বলেন, শহীদ সালাম-বারকাত হলে ২৯৯ জন ভোটার থাকলেও ৪০০ ব্যালট পাঠানো হয়েছে।

ছাত্রদলের প্রার্থী শেখ সাদী হাসানও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভোট গণনার জন্য ব্যবহৃত মেশিনগুলো একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের সমর্থিত কোম্পানির সরবরাহ করা।

শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম অভিযোগ করেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে শিবির সমর্থকরা লিফলেট বিতরণ করছে এবং ভোটারদের আঙুলে কালি দেওয়া হচ্ছে না।

তবে শিবিরের প্রার্থী মজহারুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যদি কেউ প্রার্থীদের তালিকা দেখতে চান, তখনই আমরা লিফলেট দিচ্ছি।

এদিকে সকালে ভোট শুরুতে এজেন্ট নিয়োগে জটিলতা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি হলে ১০-৩০ মিনিট দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানান, তথ্য বিলম্বে পৌঁছানোয় এই সমস্যা হয়।

১৯৯১ সালের পর জাবিতে এই প্রথম জাকসু নির্বাচন হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে ১৭৭ জন এবং হল সংসদগুলোর ৪৪৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা। ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মোট আটটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বিজিসিএস)। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি, কারণ সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ।

ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, আনসার, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ৬৭ জন শিক্ষক প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১২টি প্রবেশপথে পুলিশের নজরদারি এবং প্রতিটি হলে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোট গণনায় প্রথমবারের মতো অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোটগ্রহণ শেষে তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের বড় স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে।

এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্থবিরতা ভেঙে নতুন নেতৃত্ব আসবে বলে শিক্ষার্থীরা আশা করছেন। তবে প্রার্থীদের অভিযোগ ও অনিয়মের খবর ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।