নেপালের অস্থিরতায় সীমান্তে ভারতের কড়াকড়ি

নেপালের সাম্প্রতিক ‘জেন জি’ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তাল পরিস্থিতির জেরে দেশটির সঙ্গে দুটি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এই আকস্মিক পদক্ষেপে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার পানিট্যাঙ্কি এবং উত্তরপ্রদেশের সনৌলি মহারাজাগঞ্জ সীমান্তে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শত শত ভারতীয় ট্রাকচালক সীমান্তে আটকা পড়েছেন।

আন্দোলনের আঁচ যেন ভারতে ছড়াতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দার্জিলিংয়ের পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি), কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ডগ স্কোয়াড দিয়ে প্রতিটি যানবাহন ও যাত্রীর পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং শিলিগুড়ি-নেপাল সরকারি বাস পরিষেবাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ কুমার যাদব, এসএসবি’র ডিআইজি মনোজিত সিং এবং দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ ইন্দো-নেপাল সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ বলেন, ‘আমরা সীমান্তে নাকা তল্লাশি শুরু করেছি। এপারে অশান্তির কোনো খবর না থাকলেও আমরা সতর্ক আছি এবং নেপাল পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।’ তিনি আরও জানান, নেপালে কোনো ভারতীয় সমস্যায় পড়লে দার্জিলিং জেলা পুলিশের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

উত্তেজিত পরিস্থিতির মধ্যে নেপালে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এসএসবি। পর্যটক, পশুপতি নাথ মন্দিরের দর্শনার্থী কিংবা ব্যবসায়িক কাজে গিয়ে আটকে পড়া ভারতীয়দের পরিচয়পত্র যাচাই করে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে থাকা নেপালি নাগরিকদেরও দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে। আটকে পড়া ভারতীয়দের সহায়তায় দার্জিলিং জেলা পুলিশ ২৪ ঘণ্টার একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালে সাম্প্রতিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। ‘জেন জি’ আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও নেপালের কৃষিমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং উত্তেজিত জনতা কতিপয় মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতে থাকা অনেক নেপালি নাগরিক উদ্বেগের সঙ্গে দেশে ফিরছেন। গণেশ বাহাদুর নামে এক নেপালি বাসিন্দা বলেন, ‘নেপালের পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে এখন কী করব! আমার পরিবারের সবাই নেপালে আছে, তাই আমাকে ফিরতেই হচ্ছে। পরিবারের সবাই ওখানে থাকায় একটু ভয়ও লাগছে।’

ইন্দো-নেপাল সীমান্তে সব ধরনের আন্দোলন ও মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। নেপালের পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে নিরাপত্তা নজরদারি আরও বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।