বাংলাদেশের জ্বালানি ভবিষ্যৎ: আলোচনায় সৌর ও পারমাণবিক প্রযুক্তি

বাংলাদেশের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে পরবর্তী প্রজন্মের পারমাণবিক প্রযুক্তির বিপরীতে সৌরশক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অ্যানথ্রোপোসিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কার্ল পেজ আধুনিক পারমাণবিক প্রযুক্তির প্রস্তাব দিলেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহৎ পরিসরে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে কার্ল পেজ বার্জ-ভিত্তিক পারমাণবিক চুল্লির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি সাশ্রয়ী, এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং এটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্প খাতে কয়েক দশক ধরে নির্ভরযোগ্য ও কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাংকের মতো বড় উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থাগুলোর কাছে পারমাণবিক শক্তি এখন আর নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয় এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে এ প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে।

পেজের মতে, উদ্ভাবনে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান থাকায় দেশটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, জ্বালানির দাম স্থিতিশীল থাকবে এবং শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা বাড়বে।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা দ্রুত কমানোর প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করলেও পারমাণবিক প্রযুক্তির বিষয়ে সতর্ক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, এ ধরনের কোনো বিকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কঠোর গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাই অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এসব সুযোগ অনুসন্ধান করব। তবে প্রতিশ্রুতিশীল এসব প্রযুক্তি নিয়ে গভীর গবেষণা দরকার।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি একটি নতুন জাতীয় বিদ্যুৎ নীতি প্রণয়ন করেছে, যেখানে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তার মতে, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে দীর্ঘদিন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকা সম্ভব নয়।

বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সরকারের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে সব পক্ষই জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা থেকে দ্রুত সরে আসার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

সূত্র: বাসস