তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলতে আইন জোরদার করার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন ও অসংক্রামক রোগে (এনসিডি) অকালমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ কমানোর লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তামাক। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম: আইন শক্তিশালীকরণে নাগরিক মতামত’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ মত দেন তারা। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে প্রজ্ঞা (জ্ঞান অগ্রযাত্রা) ও অ্যান্টি-টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আটমা)।
বৈঠকে অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকরা সর্বসম্মতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানান।

তথ্য উপস্থাপনকালে বলা হয়, দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই এনসিডিজনিত, যেমন হৃদরোগ ও ক্যান্সার। এর অন্যতম বড় কারণ তামাক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তামাক বহুমাত্রিক ক্ষতির উৎস। আইন শক্তিশালী করা সরকারের জন্য একটি ‘স্বাক্ষর সংস্কার’ হবে।

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর গোলাম মোহিউদ্দিন ফারুক জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা ক্যান্সার রোগীদের আহাজারি শুনেছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একই পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। খসড়া সংশোধনী এখনই পাস করতে হবে।

বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের ডা. আবু জামিল ফয়সল, বিআইআইএসএস-এর মহফুজ কবির এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া উন্নয়ন পরামর্শক অনুপম হোসেনও একই আহ্বান জানান।

তারা জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ শুধু এনসিডি হ্রাসেই নয়, বরং ই-সিগারেট ও ভ্যাপিংয়ের বাড়তি হুমকি ঠেকাতেও জরুরি। এসব পণ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তারা।

এ সময় বক্তারা আরও সতর্ক করে জানান, তামাক কোম্পানির প্রভাবশালী লবিং যেন এ গুরুত্বপূর্ণ আইন সংস্কার বিলম্বিত করতে না পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছে- জনসমাগমস্থলে ধূমপান জোন বাতিল করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম বন্ধ করা, খোলা তামাক বিক্রি বন্ধ করা এবং ই-সিগারেট ও সংশ্লিষ্ট পণ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনটি পাস হলে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত প্রজন্ম গঠনের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করবে।