বিদেশি ওষুধের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশে উৎপাদিত ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট করা ওষুধের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের মাটিতে ওষুধের উৎপাদন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গৃহীত এই সিদ্ধান্ত আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় এই নতুন শুল্কের বিষয়টি জানানো হয়।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, যেসব ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা তৈরির কাজ শুরু করেনি, তাদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর এই বিপুল হারে শুল্ক বসানো হবে। এর আগে, গত এপ্রিলে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ আমদানি করা ওষুধের ওপর একটি জাতীয় নিরাপত্তা তদন্ত শুরু করেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

তথ্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্স (ওইসি) অনুসারে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ২১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ওষুধ আমদানি করেছে। এটি ছিল গত বছরের পঞ্চম বৃহত্তম আমদানি পণ্য। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার। তবে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ওষুধ আমদানির পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার এবং রপ্তানি হয়েছিল ৮ হাজার ২৮০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ওষুধ আমদানি করে আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো ওষুধের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা, সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটানো। বিশেষ করে বৈশ্বিক সংকটের সময়ে ওষুধের জন্য বিদেশি নির্ভরতা কমাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে আগস্টে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, প্রথমে কম হারে শুল্ক আরোপ করা হলেও এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তা বাড়িয়ে ১৫০ শতাংশ এবং পরে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত করা হতে পারে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর মার্ক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের মতো বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। সুইস সংস্থা রোশ আগামী পাঁচ বছরে ৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। এছাড়া এলি লিলি টেক্সাসে ৬৫০ কোটি ডলারের একটি কারখানা তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

এই ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে ওষুধ শিল্পে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করলেও, তাদের মতে শুল্ক আরোপ এর সবচেয়ে কার্যকর উপায় নাও হতে পারে। শিল্প নেতারা বলছেন, উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করা একটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ৬১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান বছরে অন্তত একটি ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেন। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই শুল্কের ফলে ওষুধের দাম বাড়তে পারে এবং সরবরাহ সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।