‘কালো বিষাক্ত পদার্থ, সালফারের গন্ধ’: গাজাগামী ত্রাণ বহরে ড্রোন হামলার অভিযোগ

গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় একাধিক ড্রোন হামলার অভিযোগ উঠেছে। বহরটিতে থাকা স্কটিশ কর্মী জেমস হিকি জানিয়েছেন, তাদের নৌকায় সালফারের গন্ধযুক্ত কালো বিষাক্ত পদার্থ ফেলা হয়েছে। গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এই ঘটনা ঘটে।

ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি দলের সদস্য জেমস হিকি এই অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, সিসিলির পোর্তো পালো থেকে যাত্রা শুরুর পর আন্তর্জাতিক জলসীমায় তারা ড্রোন হামলার শিকার হন। হিকি বলেন, ‘কিছু নৌকার ওপর সালফারের গন্ধযুক্ত কালো বিষাক্ত পদার্থ ফেলা হয়। অন্য নৌকাগুলোয় স্টান গ্রেনেডের মতো উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখা যায়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও সৌভাগ্যবশত আমাদের কোনো নাবিক বা অংশগ্রহণকারী আহত হননি।’

এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে হিকি জানান, ফ্লোটিলাটি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শনের পাশাপাশি চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল ত্রাণ এবং ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য ভালোবাসা ও সংহতির বার্তা বহন করছি। আমাদের এখানে থাকার কথা নয়। এই কাজটি আমাদের সরকারের করা উচিত ছিল।’

আয়োজকদের মতে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা প্রায় দুই দশকের মধ্যে এই ধরনের সবচেয়ে বড় ত্রাণ মিশন। গ্লাসগোর সেল্টিক ফুটবল ক্লাবের আজীবন সমর্থক হিকি এই মিশনকে ঐতিহাসিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেন। তিনি ব্রিটিশ-আইরিশদের ওপর নিপীড়নের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের তুলনা করে বলেন, ‘আমরা জানি, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো মানবতাবাদী কর্মীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়। আমরা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও চরমপন্থার আশঙ্কা করছি।’

ইসরায়েল বারবার গাজার নৌ অবরোধ ভাঙার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা আবারও এই হুমকি পুনর্ব্যক্ত করে অঞ্চলটিকে ‘যুদ্ধাঞ্চল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার মার্কিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে বলেন, ‘তেল আবিব কোনো জাহাজকে যুদ্ধাঞ্চলে প্রবেশ করতে দেবে না।’

হিকি এই ফ্লোটিলাকে একটি অরাজনৈতিক, অধর্মীয় এবং মানবিক মিশন হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে ছয়টি মহাদেশের ৪৫টি দেশের স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তিনি জানান, গাজায় চলমান ‘গণহত্যা, জাতিগত নিধন, মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও বর্ণবৈষম্যের’ বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং যেসব সরকার ‘জায়নবাদী সত্তার সঙ্গে সহযোগিতা করছে বা এই গণহত্যায় অংশ নিচ্ছে’ তাদের প্রতি হতাশা থেকে অংশগ্রহণকারীরা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

ফ্লোটিলাটি একাধিক ড্রোন হামলার সম্মুখীন হয়েছে। বুধবার আয়োজকরা জানান, নয়টি জাহাজে ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, তবে তারা হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করেননি। ফ্লোটিলাকে থামানোর জন্য বারবার হুমকি দিলেও ইসরায়েল এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। হিকি তার অংশগ্রহণের পেছনের নৈতিক অপরিহার্যতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ, যারা এই গণহত্যা এবং আমাদের নিজেদের, আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য একটি ফ্যাসিবাদী ভবিষ্যতের বিরোধিতা করতে একত্রিত হয়েছি।’