এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের পর পাকিস্তানের মানবিক সিদ্ধান্ত ও ক্ষোভ

এশিয়া কাপ ফাইনালে হারের পর ভারতীয় দলের আচরণে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। একইসঙ্গে দলটি তাদের ফাইনাল ম্যাচের পুরো ফি গত মে মাসে ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের পরিবারকে দান করার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান দলের অধিনায়ক সালমান আলি আগা এই মানবিক সিদ্ধান্তের কথা জানান।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে শেষ মুহূর্তের উত্তেজনায় পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ভারত। কিন্তু ম্যাচ শেষে এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান ও দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতীয় দল। জিও নিউজের খবরে বলা হয়, এই ঘটনায় ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠান প্রায় ৯০ মিনিট বিলম্বিত হয়। এর আগে পুরো প্রতিযোগিতা জুড়েই ভারতীয় খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা পাকিস্তানি দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন এবং দুই দলের মধ্যে তিনবার দেখা হলেও কোনোবারই তারা হাত মেলাননি।

ম্যাচ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আগা বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় ভারত যা করেছে, তা খুবই হতাশাজনক। তারা হাত না মিলিয়ে শুধু আমাদের অসম্মান করেনি, ক্রিকেটকেই অসম্মান করেছে। আজ তারা যা করেছে, ভালো দলগুলো তা করে না। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলাম বলে ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলাম। আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে পদক নিয়েছি। আমি কঠোর শব্দ ব্যবহার করতে চাই না, কিন্তু তারা খুব অসম্মানজনক আচরণ করেছে।’

ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই উল্লেখ করে আগা জানান, সিদ্ধান্তটি তার হাতে থাকলে তিনি অবশ্যই হাত মেলাতেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলন ও রেফারির বৈঠকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যামেরার সামনে তারা হাত মেলান না। আমি নিশ্চিত যে তিনি ওপরের নির্দেশনা মেনে চলছেন, নিজের ইচ্ছায় হলে তিনি অবশ্যই হাত মেলাতেন।’

সালমান আলি আগা আরও বলেন, দলগুলোর মধ্যে হাত না মেলানোর কোনো নজির নেই এবং এটি খেলাধুলাসুলভ মনোভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৭ সাল থেকে পেশাদার ক্রিকেট খেলছি এবং কখনো এমন দেখিনি। এই প্রতিযোগিতায় যা ঘটেছে তা খুব খারাপ এবং আমি আশা করি এটি কোনো না কোনো সময় থামবে, কারণ এটি ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর।’

শিশুদের ওপর এই ধরনের আচরণের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আগা বলেন, ‘আমি শুধু পাকিস্তানের অধিনায়ক নই, একজন ক্রিকেট অনুরাগীও। ভারত বা পাকিস্তানের যেসব শিশু এই খেলা দেখছে, আমরা তাদের ভালো কোনো বার্তা দিচ্ছি না। মানুষ আমাদের আদর্শ মনে করে, কিন্তু এমন আচরণ করলে আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারছি না। যা ঘটেছে তা হওয়া উচিত ছিল না।’

সংবাদ সম্মেলনের শেষে আগা দলের মানবিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, ‘দল হিসেবে আমরা এশিয়া কাপ ফাইনালের ম্যাচ ফি মে মাসের ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের পরিবারকে দান করছি। কারণ আমরা শুধু খেলোয়াড় নই, মানুষও। যারা আহত হয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।’