১৪০০ বছরের প্রথা ভেঙে প্রথম নারী আর্চবিশপ পেল চার্চ অব ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী চার্চ অব ইংল্যান্ডে ১৪০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী আর্চবিশপ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সারাহ মুলালি। এক আলোচিত নির্যাতন কেলেঙ্কারির জেরে পূর্বসূরির পদত্যাগের পর তিনি ক্যান্টারবারির ১০৬তম আর্চবিশপ হিসেবে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।

যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজা তৃতীয় চার্লস তার এ নিয়োগ অনুমোদন করেছেন। এর আগে, জাস্টিন ওয়েলবির উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিটি সারাহ মুলালির নাম প্রস্তাব করেছিল। শুক্রবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্চ অব ইংল্যান্ডের নতুন নেতা হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়।

৬৩ বছর বয়সী সারাহ মুলালি গির্জায় যোগদানের আগে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং একটা সময় ইংল্যান্ডের প্রধান নার্সিং কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করেন। নতুন দায়িত্বকে একটি ‘বৃহৎ দায়িত্ব’ হিসেবে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘শান্তি ও ঈশ্বরের ওপর আস্থা’ নিয়ে তিনি এই পদে আসীন হচ্ছেন।

সারাহ মুলালির এই নিয়োগ এমন এক সময়ে এলো, যখন চার্চ অব ইংল্যান্ড একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করছে। তার পূর্বসূরি জাস্টিন ওয়েলবিকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল সত্তরের দশকে চার্চে সংঘটিত একাধিক শিশু নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর। একটি স্বতন্ত্র তদন্তে দেখা যায়, আইনজীবী জন স্মাইথ ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে আয়োজিত ক্যাম্পে প্রায় ১৩০ জন কিশোর ও তরুণকে নির্যাতন করেছিলেন। ২০১৩ সালে বিষয়টি জানার পরও ওয়েলবি কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হন।

নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত স্মাইথ ব্রিটিশ পুলিশের তদন্ত চলাকালে ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭৫ বছর বয়সে মারা যান এবং তাকে কখনো ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়নি। এই কেলেঙ্কারি যুক্তরাজ্যজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং চার্চে সংস্কারের দাবিকে জোরালো করে তোলে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার প্রথম নারী আর্চবিশপের নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চার্চ অব ইংল্যান্ড আমাদের দেশের জন্য গভীর গুরুত্ব বহন করে এবং নতুন আর্চবিশপ জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।’

উল্লেখ্য, ১৫৩০-এর দশকে রাজা অষ্টম হেনরি রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অ্যাংলিকান চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে রাষ্ট্রীয় চার্চ হিসেবে পরিচিতি পায়। পদাধিকারবলে ব্রিটিশ সম্রাটই এই চার্চের সর্বোচ্চ গভর্নর। বর্তমানে চার্চটির প্রায় দুই কোটি বাপ্তাইজড সদস্য থাকলেও, ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী নিয়মিত গির্জায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১০ লাখের কম।