সুইস বিজ্ঞানীরা জীবন্ত কোষ ব্যবহার করে ‘বায়োকম্পিউটার’ তৈরির একটি যুগান্তকারী প্রকল্পে কাজ করছেন, যা এতদিন কেবল কল্পবিজ্ঞানের অংশ ছিল। তাদের লক্ষ্য হলো এমন ডেটা সেন্টার তৈরি করা, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কাজ করবে কিন্তু অনেক কম শক্তি ব্যবহার করবে।

ছবি - সংগৃহীত

শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। গবেষকরা এই নতুন প্রযুক্তিকে ‘ওয়েটওয়্যার’ নাম দিয়েছেন, যা কম্পিউটিং জগতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি একটি নতুন উপাদান হিসেবে যুক্ত হতে পারে। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ফাইনালস্পার্ক গবেষণাগার। এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেড জর্ডান বলেন, ‘যখন আপনি একটি নিউরনকে ছোট একটি যন্ত্রের মতো ব্যবহার করার কথা ভাবেন, তখন এটি আমাদের নিজেদের মস্তিষ্ক সম্পর্কেও নতুন করে ভাবতে শেখায় এবং আমরা আসলে কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে।’ তিনি স্বীকার করেন যে ‘বায়োকম্পিউটার’-এর ধারণাটি অনেকের কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে, কারণ এর জন্ম কল্পবিজ্ঞানের গল্পে।

বায়োকম্পিউটার তৈরির প্রথম ধাপে মানুষের ত্বক থেকে স্টেম সেল বা মূল কোষ সংগ্রহ করা হয়। এরপর গবেষণাগারে সেই কোষ থেকে মস্তিষ্কের মতো ক্ষুদ্র গোলক তৈরি করা হয়, যা ‘অরগ্যানয়েড’ নামে পরিচিত। গবেষকরা জানান, অরগ্যানয়েডগুলো মানব মস্তিষ্কের মতো জটিল না হলেও এদের মৌলিক গঠন একই।

কয়েক মাস ধরে চলা এই প্রক্রিয়ার পর অরগ্যানয়েডগুলোকে বৈদ্যুতিক সংযোগ বা ইলেকট্রোডের সঙ্গে যুক্ত করা হয় এবং কি-বোর্ডের সাধারণ নির্দেশনার প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দিতে বলা হয়। যখন একটি অরগ্যানয়েড বৈদ্যুতিক সংকেত পায়, তখন কম্পিউটারের পর্দায় একটি গ্রাফে তার কার্যকলাপ ফুটে ওঠে, যা অনেকটা মস্তিষ্কের ইইজি পরীক্ষার মতো। এভাবে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠানো ও গ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় এবং ফলাফল কম্পিউটারে রেকর্ড করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে অরগ্যানয়েডের শেখার ক্ষমতা এবং নির্দেশের বিপরীতে সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা চলছে। ফ্রেড জর্ডান বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে বিষয়টি একই। আপনি একটি ইনপুট দেন এবং তার বিপরীতে একটি আউটপুট চান। যেমন, আপনি একটি বিড়ালের ছবি দিলে মেশিনটি বলে দেবে এটি বিড়াল কি না।’

তবে বায়োকম্পিউটারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর শক্তির উৎস কী হবে তা নির্ধারণ করা। সাধারণ কম্পিউটার বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চালু রাখা গেলেও বায়োকম্পিউটারের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। নিজেদের পুষ্টি জোগানোর জন্য প্রয়োজনীয় রক্তনালিও এদের নেই। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের নিউরোটেকনোলজি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সাইমন শুলৎজ বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না কীভাবে এদের সঠিকভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ তবে ফাইনালস্পার্কের গত চার বছরের গবেষণার ফলে অরগ্যানয়েডগুলোকে এখন চার মাস পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে ফাইনালস্পার্কের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু গবেষণাগারে এই ধরনের প্রচেষ্টা চলছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংস্থা কর্টিক্যাল ল্যাবস জানায়, তারা এমন কৃত্রিম নিউরন তৈরি করেছে যা কম্পিউটার গেম খেলতে সক্ষম। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ‘মিনি ব্রেন’ বা ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক তৈরির চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে আলঝেইমার ও অটিজমের মতো রোগের জন্য ওষুধ তৈরি এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা সহজ হবে।

গবেষণা দলের প্রধান লেনা স্মিরনোভা জানিয়েছেন, ‘ওয়েটওয়্যার’ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি কম্পিউটার চিপে ব্যবহৃত মূল উপাদানকে প্রতিস্থাপন করার সম্ভাবনা বর্তমানে খুব কম। তিনি আরও বলেন, ‘বায়োকম্পিউটিং সিলিকন-ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে, একে প্রতিস্থাপন করবে না। একইসঙ্গে এটি রোগ নিয়ে গবেষণাকে এগিয়ে নেবে এবং প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা কমাবে।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজেই হয়তো ভবিষ্যতে এই ধরনের গবেষণার গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.