রুবিও: ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি মিলেছে

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার কাঠামোতে হামাস সম্মতি দিয়েছে এবং এখন এর বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা চলছে। রবিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি এই তথ্য জানান।

এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুবিও বলেন, শুক্রবার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির দেওয়া এক বিবৃতি থেকে এটি স্পষ্ট যে তারা ‘প্রেসিডেন্টের জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত কাঠামোয় সম্মতি দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন যা হওয়া প্রয়োজন, এবং তারা তাদের চিঠিতে ও জবাবে যা স্বীকার করেছে, তা হলো— এখন বৈঠক হওয়া দরকার, যা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে... এবং আশা করি খুব দ্রুতই এর বাস্তবায়নের কৌশল চূড়ান্ত হবে।’

রুবিও জানান, এই আলোচনাগুলোতে মূলত কারা হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের গ্রহণ করবে এবং কখন ও কোথায় তাদের মুক্তি দেওয়া হবে, সেসব বিষয় প্রাধান্য পাবে। তিনি যোগ করেন, এটি সফল করতে হলে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক বলেন, ‘এই বিনিময়ের মাঝখানে বোমা বিস্ফোরণ এবং লড়াই চলতে পারে না।’

পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের পর্যায়ক্রমিক সেনা প্রত্যাহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রুবিও বলেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজার ভেতরে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে অবস্থান করছিল, সেখানে ফিরে যাবে এবং তারা এই অংশে সম্মতি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসরায়েলসহ সকলেই শেষ পর্যন্ত একমত হয়েছে যে, এই প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো এক পর্যায়ে গাজা হামাস নয়, বরং ফিলিস্তিনি একটি কারিগরি গোষ্ঠীর মাধ্যমে শাসিত হবে।’ এই প্রশাসনের ‘একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সহায়তা ও নির্দেশনা’ থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ফক্স নিউজকে দেওয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে রুবিও বলেন, জিম্মিদের মুক্তির পর গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘শাসন কাঠামো তৈরির জন্য শুধু লোকবল দিয়েই নয়, বরং অর্থ ও সম্পদ দিয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ রুবিও আরও বলেন, ‘সেখানে (গাজায়) অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো জায়গাটি পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এটি ৭২ ঘণ্টা বা ছয় সপ্তাহে ঘটবে না। এতে কিছুটা সময় লাগবে।’

রুবিও এই প্রস্তাবের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন ও অবদানের কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া এবং ইউরোপীয় দেশগুলোসহ সকলেই একটি পরিকল্পনার পেছনে সারিবদ্ধ হয়েছে।’ উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৯ সেপ্টেম্বর তার পরিকল্পনাটি প্রকাশ করেন, যেখানে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি, গাজায় যুদ্ধবিরতি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা পুনর্গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। হামাস শুক্রবার নীতিগতভাবে এই পরিকল্পনায় সম্মত হয় এবং এ বিষয়ে মিশরে আরও আলোচনার কথা রয়েছে।

তেল আবিবের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় এখনো ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত। অন্যদিকে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর তথ্যমতে, ইসরায়েল তাদের কারাগারে প্রায় ১১,০০০ ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে, যাদের অনেকেই নির্যাতন, অনাহার এবং চিকিৎসায় অবহেলার শিকার। ট্রাম্পের অবিলম্বে হামলা বন্ধের আহ্বান সত্ত্বেও, শনিবার গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় এক শিশুসহ অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে চিকিৎসক ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় ৬৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ভূখণ্ডটির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।