অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানালেন তারেক রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকার কতটুকু সফল হবে, তার ওপরই এই সম্পর্কের উষ্ণতা বা শীতলতা নির্ভর করবে। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা চাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক’। তিনি মনে করেন, কিছু অপরিহার্য সংস্কারসহ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানই এই সরকারের মূল দায়িত্ব। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি প্রত্যাশা করে, সরকার তাদের ওপর অর্পিত এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে।

সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান স্বীকার করেন যে, একসময় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। তিনি জানান, নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা না দেওয়ায় শুধু তার মধ্যেই নয়, বরং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ অনেকের মনেই এই সন্দেহ ছিল। তবে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেন এবং সেই সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকেন, তখন থেকে সেই সন্দেহ ধীরে ধীরে দূর হতে শুরু করেছে।

লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়েও কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি জানান, সৌজন্যমূলক আলোচনার পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। জনগণ বিএনপিকে সুযোগ দিলে দেশের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে তিনি ড. ইউনূসকে নিজের চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রশ্নে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্যের বিষয়টিকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তারেক রহমান। একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান—এই তিন পদে থাকতে পারবেন না, এমন প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিলেই সমস্যা, আর সবার সঙ্গে একমত হলে ঠিক আছে—এটা তো গণতন্ত্র হতে পারে না’। তার মতে, গণতন্ত্র মানেই বিভিন্ন মতের উপস্থিতি এবং দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ থাকা। তিনি আরও বলেন, একজন ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকলেই তিনি স্বৈরাচারী হবেন, এমনটা নয়। এটি ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে।

এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার নিয়েও নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরেন তারেক। তিনি সেই সরকারকে ‘অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, ওই সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করেছিল।

ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘জি, ইয়েস পারি। একদম দিতে পারি’। তিনি জানান, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, এমনকি অনেক অপপ্রচারমূলক খবরও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বকারী সব ‘কালো আইন’ সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাতিল বা সংস্কার করা হবে। তবে তিনি অপপ্রচারকে সংবাদ হিসেবে প্রচার না করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।