পাকিস্তানে সেনা কর্মকর্তাসহ ১১ নিরাপত্তা সদস্য নিহত

পাকিস্তানে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশটির দুই সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত ১১ জন নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনী বুধবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওরাকজাই জেলায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর ‘কার্যকর প্রতিরোধে’ ১৯ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। তবে এই গুলি বিনিময়ের সময় ৩৯ বছর বয়সি লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনায়েদ আরিফ এবং তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ৩৩ বছর বয়সি মেজর তৈয়ব রাহাতসহ আরও নয়জন ‘সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ’ করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা বেড়েছে। গত মাসে প্রদেশটির দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জেলায় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময় অন্তত ১২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছিলেন।

পাকিস্তান এই ধরনের হামলার জন্য আফগানিস্তানকে দায়ী করে আসছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে, কাবুলের মাটি ব্যবহার করে টিটিপি সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে, যা প্রতিরোধে আফগান সরকার ব্যর্থ। তবে আফগানিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। প্রতিবেশী দেশে হামলার জন্য নিজেদের মাটি ব্যবহার করতে না দেওয়ার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মঙ্গলবার আফগানিস্তান বিষয়ক মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশনে পাকিস্তান একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ আফগানিস্তানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদিক জানান, তিনি ‘আফগানিস্তানের মাটি থেকে পরিচালিত সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল এবং কার্যকরভাবে সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য সম্মিলিত আঞ্চলিক প্রচেষ্টার জরুরি প্রয়োজনের’ ওপর জোর দিয়েছেন।

অন্যদিকে, আফগানিস্তানে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতি নিয়ে কয়েকটি দেশের যৌথ বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দাবি করেন, তার দেশের মাটিতে এমন কোনো গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আফগানিস্তানে এমন কোনো গোষ্ঠী নেই যারা অন্য দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করতে আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে’। তিনি আরও যোগ করেন, আফগান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে যে আইএসআইএস (দায়েশ) এবং অন্যান্য গোষ্ঠী সম্প্রতি এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যা আফগান সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে সহিংসতা বৃদ্ধি

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (সিআরএসএস) এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে পাকিস্তানে সহিংসতা তীব্রভাবে বেড়েছে। এই সময়ে সন্ত্রাসী হামলা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান মিলিয়ে মোট ৩২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৯০১ জন নিহত এবং ৫৯৯ জন আহত হয়েছেন।

এই পরিসংখ্যান আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি। ফলে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২,৪১৪ জনের প্রাণহানি রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বছরের মোট ২,৫৪৬ জনের প্রাণহানিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে।

মোট সহিংসতার প্রায় ৯৬ শতাংশই ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়া, যেখানে প্রায় ৭১ শতাংশ অর্থাৎ ৬৩৮ জনের মৃত্যু এবং ৬৭ শতাংশ অর্থাৎ ২২১টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এরপরই বেলুচিস্তানে ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৩০ জনের মৃত্যু এবং ৮৫টি সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।