মাত্র ২৭ দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফ্রান্সে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। নিয়োগ পাওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু পদত্যাগ করায় প্যারিসে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এখন তিনটি কঠিন বিকল্পের মুখোমুখি হয়েছেন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিষদে আস্থা ভোটে ফ্রাঁসোয়া বাইরোর পরাজয়ের পর সেবাস্তিয়ান লেকর্নু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার ওপর ফ্রান্সের ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ (জিডিপির ১১৫ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার দায়িত্ব ছিল। প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয়ের একটি পরিকল্পনার জন্য সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছিলেন বাইরো।
লেকর্নু এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল, যা প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পূর্ববর্তী সরকার ও নীতি থেকে ভিন্ন হবে। কিন্তু নতুন শুরুর সেই আশা দ্রুতই মিলিয়ে যায়। পূর্ববর্তী সরকারের পরিচিত মুখদের নিয়েই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার একদিন পরেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে লেকর্নু পদত্যাগ করেন। ম্যাক্রোঁও তার পদত্যাগপত্র দ্রুত অনুমোদন করেন। মাত্র ২৭ দিন দায়িত্ব পালন করে তিনি ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হলেন।
দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর ম্যাক্রোঁ এখন সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকেই ‘দেশের জন্য একটি কার্যকর ও স্থিতিশীল মঞ্চ’ তৈরির লক্ষ্যে চূড়ান্ত আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে ম্যাক্রোঁ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হলে তিনি নিজেই ‘দায়িত্ব নেবেন’। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্স রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে: ম্যাক্রোঁ কি নতুন আরেকজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন? তিনি কি সংসদ ভেঙে দেবেন? নাকি নিজের পদত্যাগের মতো অচিন্তনীয় পথে হাঁটবেন?
লেকর্নু কেন পদত্যাগ করলেন? মূলত ম্যাক্রোঁর মিত্রদের নিয়ে গঠিত প্রায় অপরিবর্তিত একটি মন্ত্রিসভা গঠনের কারণে লেকর্নু ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন। এমনকি পুনঃনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিতেলুও এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পদত্যাগের হুমকি দেন বলে জানা যায়।
সোমবার পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেকর্নু বলেন, ‘তিন সপ্তাহ ধরে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না হওয়ায়’ তিনি আর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারেননি। তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধানের বিতর্কিত ৪৯.৩ অনুচ্ছেদ (যা সরকারকে সংসদীয় ভোট ছাড়াই বিল পাসের সুযোগ দেয়) ব্যবহার না করার তার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক দলগুলো উপেক্ষা করেছে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো এমন আচরণ করছে যেন জাতীয় পরিষদে তাদের প্রত্যেকেরই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমি নিজেকে এমন এক পরিস্থিতিতে খুঁজে পেয়েছি যেখানে আমি সমঝোতার কাছাকাছি ছিলাম।’
লেকর্নু কি পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন? চূড়ান্ত আলোচনার দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে যে, আলোচনা সফল হলে লেকর্নু পুনরায় প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেতে পারেন কি না। যদিও এই সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে যা তিনি ২৭ দিনে করতে পারেননি, তা ৪৮ ঘণ্টায় করতে পারবেন বলে খুব কম মানুষই বিশ্বাস করেন। ফরাসি সংবাদপত্র ‘ল্য ফিগারো’র তথ্য অনুযায়ী, লেকর্নু এরই মধ্যে ম্যাক্রোঁকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আলোচনার ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তিনি পুনরায় নিয়োগ পেতে আগ্রহী নন।
ম্যাক্রোঁ কী করবেন? এখন সবার চোখ প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দিকে। তার সামনে মূলত তিনটি পথ খোলা: সহাবস্থান, সংসদ ভেঙে দেওয়া অথবা পদত্যাগ।
প্রথম বিকল্প হলো ‘সহাবস্থান’, অর্থাৎ বিরোধী শিবির থেকে কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া। ডানপন্থী রিপাবলিকান দলের নেতা রিতেলু জানিয়েছেন, ম্যাক্রোঁর রেনেসাঁস পার্টির সঙ্গে সহাবস্থানের শর্তে তার দল সরকারে ফিরতে পারে। অন্যদিকে, সমাজতন্ত্রী নেতা অলিভিয়ের ফরে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে একটি বামপন্থী সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
দ্বিতীয় বিকল্পটি হলো সংসদ ভেঙে দেওয়া। লেকর্নু পদত্যাগ করার পর থেকেই কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি দলের নেত্রী মেরিন ল্য পেন ম্যাক্রোঁকে পদত্যাগ অথবা সংসদ ভেঙে দেওয়ার মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, নতুন সংসদীয় নির্বাচনে ল্য পেনের দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে।
সবচেয়ে অচিন্তনীয় হলেও শেষ বিকল্পটি হলো ম্যাক্রোঁর নিজের পদত্যাগ, যার পক্ষে রাজনৈতিক মহলে সমর্থন দিন দিন বাড়ছে। সাবেক ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ডানপন্থী রিপাবলিকান দলের সহ-সভাপতি ডেভিড লিসনার্ড বলেছেন, ‘ফ্রান্সের স্বার্থেই ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগের দিন নির্ধারণ করা উচিত।’ ‘ল্য ফিগারো’র এক জনমত জরিপ অনুসারে, ফ্রান্সের ৭০ শতাংশ নাগরিকও ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ চান।
তবে আপাতত ম্যাক্রোঁ এই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়া সত্ত্বেও তিনি ২০২৭ সাল পর্যন্ত তার মেয়াদ পূর্ণ করার কথাই বলে আসছেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.