আপনি পড়ছেন

ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার পর লাতিন আমেরিকাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রের পক্ষে তার সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়ায় নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন এই অঞ্চলের কোনো কোনো নেতা। তবে অন্যরা বিষয়টিকে দেখছেন ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং সহিংসতার উসকানি হিসেবে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ঘোষণার পর মাচাদোর অতীতের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড পুনরায় আলোচনায় এসেছে। তার বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উসকানি দেওয়া এবং দেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানোর অভিযোগ রয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম বলিভিয়ার সাবেক নেতা ইভো মোরালেস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘নিজের দেশে দমন-পীড়ন, সামরিক হস্তক্ষেপ এবং অভ্যুত্থানকে উৎসাহিত করেছেন এমন কাউকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া কেবল অনৈতিকই নয়, বরং এটি মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ নাগরিক জীবন লঙ্ঘনের উপায় হিসেবে সহিংসতার ব্যবহারকে উৎসাহিত করে।’

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেলও নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘২০২৫ সালে এসে এমন একজনকে এই পুরস্কার দেওয়া লজ্জাজনক, যিনি তার মাতৃভূমিতে সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বিগত বছরগুলোতে রাস্তায় সহিংস বিক্ষোভকে উৎসাহিত করেছেন, যেখানে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই রাজনৈতিক কৌশলকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি, যা ভেনেজুয়েলাকে বিভক্ত করার এবং এর বৈধ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নেতৃত্বকে দুর্বল করার চেষ্টা করে।’

তবে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমরা সবসময় সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। এটি কেবল আমাদের নীতিই নয়, আমাদের সংবিধানও এই দাবি করে। আমি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা মারিয়া কোরিনা মাচাদো প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভেনেজুয়েলায় হস্তক্ষেপ করে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এমনকি ২০১৮ সালে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চিঠি লিখে তার দেশে প্রভাব বিস্তারের অনুরোধ করেছিলেন।

তবে লাতিন আমেরিকার সব নেতার প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না। পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো মাচাদোর এই অর্জনকে উদযাপন করে এক্সে লিখেছেন, ‘একটি দুর্দান্ত বিজয়! নিঃসন্দেহে, এটি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা জনগণের পক্ষে তার শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের স্বীকৃতি।’

গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট বার্নার্দো আরেভালো মাচাদোর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এই পুরস্কারটি একজন বিরোধী নেতা হিসেবে তার সাহসী ভূমিকার প্রতিফলন। ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় আপনার ব্যক্তিগত সংগ্রাম, সাহস এবং দৃঢ় সংকল্পের একটি যথাযথ স্বীকৃতি এই নোবেল শান্তি পুরস্কার।’

প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো পেনা এই অর্জনের জন্য মাচাদোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রীর প্রতি তার দেশের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। প্যারাগুয়ে থেকে আমরা আপনার এই কঠিন সংগ্রামের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব, যাতে এই স্বপ্ন অবশেষে একদিন বাস্তবে রূপ নিতে পারে।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিতে নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বেশ জল্পনাকল্পনা চলছিল। গাজা উপত্যকায় দুই বছরের সংঘাত অবসানে তার প্রচেষ্টার কারণে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এবারের শান্তি পুরস্কারটি তিনিই পেতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত নোবেল কমিটি ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতাকেই এই পুরস্কারের জন্য বেছে নেয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.