নোবেল শান্তি পুরস্কারের তথ্য ফাঁস, গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহ

ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই তার নাম ফাঁস হয়ে যায়। এই ঘটনায় গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহ করছে নোবেল ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি এই তথ্য ফাঁসের পেছনে গুপ্তচরবৃত্তির ‘শক্তিশালী সম্ভাবনা’ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ভাটনে ফ্রিডনেস অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে মাচাদোর পুরস্কার জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনিই প্রথম ভেনেজুয়েলীয় এবং চতুর্থ দক্ষিণ আমেরিকান হিসেবে এই সম্মানজনক পুরস্কার পেলেন।

নরওয়েজীয় দৈনিক আফতেনপোস্তেন জানায়, ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে পূর্বাভাসমূলক বাজার পলিমার্কেটে মাচাদোর জয়ের সম্ভাবনা রাতারাতি ৩.৭৫ শতাংশ থেকে প্রায় ৭৩ শতাংশে পৌঁছে যায়। ফিনানসাভিসেন অনুসারে, বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারী বড় অঙ্কের বাজি ধরেন, যার মধ্যে একটি বাজির পরিমাণ ছিল ৬৭,৮২০ ডলার। জানা গেছে, তিনটি হিসাব থেকে প্রায় ৩ লাখ ক্রোনার (২৭,০০০ ডলার) আয় হয়েছে, যার মধ্যে একটি হিসাব বাজি ধরার দিনই খোলা হয়েছিল। ঘোষণার আগে কোনো বিশ্লেষক বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মাচাদোকে সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকায় রাখেনি।

নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও নোবেল কমিটির সচিব ক্রিস্টিয়ান বার্গ হারপিকেন নরওয়ের টিভি২-কে বলেন, ‘এটি গুপ্তচরবৃত্তির কাজ হওয়ার সম্ভাবনাই খুব বেশি।’ তিনি আরও জানান, ইনস্টিটিউট বিষয়টি তদন্ত করবে এবং ‘প্রয়োজনে আমরা নিরাপত্তা আরও কঠোর করব।’

হারপিকেন ব্যাখ্যা করেন, গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে ভেতর থেকে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য ফাঁস করেছে, যা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন, তবে এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে নোবেল ইনস্টিটিউট গুপ্তচরবৃত্তির শিকার হয়। রাষ্ট্র এবং অন্যান্য সংস্থা, যারা তথ্য সংগ্রহ করতে চায়, তাদের কাছে এই প্রতিষ্ঠানটি আকর্ষণীয়। এর পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় উদ্দেশ্যই থাকতে পারে। কয়েক দশক ধরেই এমনটা হয়ে আসছে।’

কমিটি জানিয়েছে, ‘ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ উত্তরণের জন্য সংগ্রামের’ স্বীকৃতি হিসেবে মাচাদোকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মাচাদোকে ভেনেজুয়েলার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করছেন, তার দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এটিকে ‘শান্তির ঊর্ধ্বে রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন।

শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, সমালোচকরা ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির প্রতি মাচাদোর অতীতের সমর্থনের বিষয়টি তুলে ধরে তাকে ‘গাজায় গণহত্যার’ সমর্থক বলে অভিযোগ করেছেন। অতীতে এক বিবৃতিতে মাচাদো লিখেছিলেন, ‘ভেনেজুয়েলার সংগ্রামই ইসরায়েলের সংগ্রাম।’ পরে তিনি ইসরায়েলকে ‘স্বাধীনতার প্রকৃত সহযোগী’ বলেও উল্লেখ করেন।

নরওয়েজীয় আইনপ্রণেতা বিয়োনার মক্সনেস উল্লেখ করেন, মাচাদো ২০২০ সালে লিকুদ পার্টির সঙ্গে একটি সহযোগিতামূলক নথিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি যুক্তি দেন, এই পুরস্কার ‘নোবেলের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।