লিবিয়ায় উত্তেজনা হ্রাস, তুরস্কের ভূমিকার প্রশংসা জাতিসংঘের

লিবিয়ায় উত্তেজনা কমে এসেছে এবং এর পেছনে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক ভাষণে এই তথ্য জানান লিবিয়ায় নিযুক্ত সংস্থাটির বিশেষ প্রতিনিধি হানা তেত্তেহ, যেখানে তিনি তুরস্কের ভূমিকার বিশেষভাবে প্রশংসা করেন।

মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে তেত্তেহ বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্মিলিত মধ্যস্থতার প্রচেষ্টায় উত্তেজনা কমেছে এবং আমি তুরস্ক সরকারের হস্তক্ষেপকে সাধুবাদ জানাতে চাই।’

গত ১৩ সেপ্টেম্বর তুরস্কের সহায়তায় স্থানীয় পক্ষগুলোর মধ্যস্থতায় বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা বাস্তবায়িত হয়। এর ফলে মিতিগা বিমানবন্দরের বেসামরিক এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে বন্দিদের হস্তান্তর করা সম্ভব হয়। এই অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েও তেত্তেহ বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনো বেশ নাজুক।’

নির্বাচনী অগ্রগতি

তেত্তেহ লিবিয়ার জনগণের গণতান্ত্রিক উপায়ে বৈধ প্রতিনিধি নির্বাচন করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃঢ়সংকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন। গত ২৩ আগস্ট জাউইয়া অঞ্চলের সাতটি পৌরসভায় কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং শনিবার লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের আরও ১৬টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে তিনি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিভক্তির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘সমান্তরাল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা আমি যথেষ্ট জোর দিয়ে বলতে পারছি না।’ তেত্তেহ উল্লেখ করেন যে, লিবিয়ায় পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি সাংবিধানিক বিচার ব্যবস্থা পৃথকভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা ‘আইনি অনিশ্চয়তা’ তৈরি করছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

রূপরেখা বাস্তবায়নে বিলম্ব

জাতিসংঘের সাপোর্ট মিশন ইন লিবিয়া (ইউএনএসএমআইএল) গত আগস্টে দেশটির জন্য একটি রাজনৈতিক রূপরেখা উপস্থাপন করেছিল। এর মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও রাজনৈতিকভাবে টেকসই নির্বাচনী কাঠামো গ্রহণ, প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করা এবং কাঠামোগত সংলাপ পরিচালনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তেত্তেহ উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত এই রূপরেখার বাস্তবায়নে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি এবং তিনি ‘লিবিয়ার সব নেতাকে’ এটি নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘রূপরেখাটি সম্পূর্ণ করতে আরও বিলম্ব বা বাধা দেওয়ার মতো অবস্থায় লিবিয়া নেই।’ তিনি আরও জানান, জাতিসংঘ নভেম্বরে শাসন, অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং জাতীয় পুনর্মিলন বিষয়ে কাঠামোগত সংলাপ সেশন আহ্বানের পরিকল্পনা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, গ্রিস, ডেনমার্ক এবং পাকিস্তানসহ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ১৩ সেপ্টেম্বরের যুদ্ধবিরতি এবং নির্বাচনী অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা সরকারসহ লিবিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরেকত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।