শেষ সময়েও কাটছে না জটিলতা, ঝুলছে জুলাই সনদের ভাগ্য

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঘনিয়েছে অনিশ্চয়তার মেঘ। সনদের আইনি ভিত্তি ও তা বাস্তবায়নের আদেশের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় এতে সই না করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার এই সনদ স্বাক্ষরের কথা থাকলেও এনসিপির এমন কঠোর অবস্থান পুরো প্রক্রিয়াকে একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তাদের চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, আইনি কাঠামো ছাড়া এই সনদে স্বাক্ষর করা একটি মূল্যহীন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। দলটি চায়, সংবিধান স্থগিত করে প্রধান উপদেষ্টা একটি বিশেষ আদেশ (প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার) জারি করুন, যার মাধ্যমে সংস্কার প্রক্রিয়াকে আইনি বৈধতা দেওয়া হবে।

এনসিপির এই ঘোষণার পর থেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্দার আড়ালে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার দিনভর নানাভাবে দলটিকে রাজি করানোর চেষ্টা চলে। জানা গেছে, সরকারের একজন উপদেষ্টার অনুরোধে দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। গভীর রাতে সরকারের দুজন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও বিষয়টি নিয়ে এনসিপির তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জুলাই সনদ নিয়ে এই নাটকীয়তার শুরু হয় মূলত মঙ্গলবার রাতে। আট মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ফসল এই সনদ স্বাক্ষরের মাত্র দুই দিন আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এনসিপি প্রথম তাদের এই শর্তের কথা জানায়। তখনই মূলত সংকট ঘনীভূত হতে শুরু করে।

পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বুধবার সন্ধ্যায় ৩০টি দলকে নিয়ে একটি ‘অতি জরুরি’ বৈঠক ডাকে। সেখানেও এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে কমিশন এখনো আশা ছাড়েনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা আশা করছেন এনসিপিসহ সব দলই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। এমনকি শুক্রবারের পরেও সনদে সই করার সুযোগ থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুটা নমনীয় হয়েছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। তবে এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অন্যদিকে, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হতে পারে, তবে তার কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।