সেনা নিয়োগ নিয়ে উত্তাল ইসরায়েল, রাজপথে হাজারো কট্টরপন্থী ইহুদি

ইসরায়েলে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের প্রতিবাদে দেশটির হাজারো কট্টরপন্থী ইহুদি (হারেদিম) রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় সেনা নিয়োগ এড়িয়ে যাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর ইসরায়েলজুড়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সেনাবাহিনীর চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়’ বলে স্লোগান দেন এবং প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করেন।

বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের মধ্য, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে রাখে। দেশটির চ্যানেল টেনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীতে যোগদানে ব্যর্থ তিনজন ইয়েশিভা শিক্ষার্থীকে সামরিক পুলিশ আটক করার পর এই বিক্ষোভ শুরু হয়। বনেই ব্রাক, জেরুজালেম, সাফেদ ও বেইত শেমেশে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন এবং বনেই ব্রাকের কাছে ৪ নম্বর মহাসড়ক ও জেরুজালেমের বার-লেভ সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করেন।

পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বনেই ব্রাকের কাছে ৪ নম্বর মহাসড়কে একটি সহিংস ও বেআইনি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যান চলাচল স্বাভাবিক করতে এবং রাস্তা পরিষ্কার করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেরুজালেমে বিক্ষোভকারীরা চলন্ত গাড়িতে পাথর ছোড়ে এবং লাইট-রেল ট্র্যাকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে বলে জানা গেছে।

ইয়েদিওথ আহরোনোথ পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, বনেই ব্রাকের বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী মৃত্যুর চেয়েও খারাপ। আমরা কারাগারে যাব, সেনাবাহিনীতে নয়।’ অন্যদিকে ইসরায়েল হায়োম পত্রিকা জানিয়েছে, কাফার ইয়োনার কাছে বেইত লিদ ঘাঁটিতে অবস্থিত ১০ নম্বর সামরিক কারাগারের বাইরে শত শত মানুষ আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

এই বিক্ষোভের নেপথ্যে রয়েছে গত ২৫ জুন, ২০২৪ তারিখে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায়। ওই রায়ে কট্টরপন্থী ইহুদি পুরুষদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অব্যাহতি বাতিল করা হয় এবং যেসব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করবে, তাদের রাষ্ট্রীয় তহবিল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ইসরায়েলের প্রায় ১ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ হারেদিম। তারা মনে করেন, সেনাবাহিনীতে যোগদান তাদের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য এবং সামাজিক কাঠামোর জন্য হুমকি, কারণ তারা তোরাহ অধ্যয়নের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। প্রভাবশালী রাব্বিরা তাদের অনুসারীদের সেনা নিয়োগ প্রত্যাখ্যান এবং নিয়োগপত্র ছিঁড়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন।

বহু দশক ধরে, বেশিরভাগ কট্টরপন্থী পুরুষ ২৬ বছর বয়সে পৌঁছানো পর্যন্ত ধর্মীয় অধ্যয়নের কথা বলে বারবার সেনা নিয়োগ এড়িয়ে যেতেন। বিরোধী আইনপ্রণেতারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি কট্টরপন্থী শাস এবং ইউনাইটেড তোরাহ ইহুদিজম দলগুলোকে সন্তুষ্ট করতে হারেদিমদের চিরতরে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছেন। এই দুটি দল চলতি বছরের শুরুতে জোট ছাড়লেও ধারণা করা হচ্ছে, এমন আইন পাস হলে তারা আবার জোটে ফিরবে।