পোল্যান্ড: ত্রাণকর্মী হত্যায় তদন্তে সহায়তা করছে না ইসরায়েল

গাজায় পোলিশ ত্রাণকর্মী হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে পোল্যান্ড। বুধবার দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় দামিয়ান সোবোল নামের ওই ত্রাণকর্মীর মৃত্যুর তদন্তকাজ এগোতে পারছে না, যা ওয়ারশ ও তেল আবিবের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে।

বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও জেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোল্যান্ডের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিস্লাভ তেওফিল বার্তোশেভস্কি বলেন, ‘ইসরায়েলি পক্ষের সমর্থনের অভাবে’ তদন্ত এক চুলও এগোয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি, তার চেয়ে বেশি কিছু নির্ধারণ করতে পারছি না। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি এবং আরও কয়েকটি দেশের সরকারও একই ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্য গাজায় খাদ্য সরবরাহকারী ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) একটি গাড়িবহরে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে সাতজন ত্রাণকর্মী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দামিয়ান সোবোল ছাড়াও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং একজন ফিলিস্তিনি চালক ছিলেন।

এই হামলার ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক নিন্দার জন্ম দেয় এবং ইসরায়েল জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পরবর্তীতে জানায়, গাড়িবহরটিকে ‘ভুলভাবে শনাক্ত’ করার কারণে এটি একটি ‘গুরুতর ভুল’ ছিল। অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত বা তিরস্কার করা হয়েছে বলেও তারা জানায়। তবে, বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং কয়েকটি দেশের সরকার বলেছে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতার মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিলে সোবোলের নিজ শহর, দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের পশেমিসেলের জেলা প্রসিকিউটরের কার্যালয় যুদ্ধাপরাধ বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা নির্ধারণের জন্য একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে। বার্তোশেভস্কি বলেছেন, মামলাটি এখনও চালু থাকলেও এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তদন্ত এগিয়ে নিতে এখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন।

পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটি পর্যালোচনার জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক আইনি প্যানেল গঠন করলেও তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। সরকারি কর্মকর্তারা ‘কূটনৈতিক গোপনীয়তা’ এবং মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার কারণ উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া, ডব্লিউসিকে যে দেশে নিবন্ধিত, সেই যুক্তরাষ্ট্রও একটি পর্যালোচনা পরিচালনা করেছে, তবে এর বিস্তারিত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেন, অন্যদিকে ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেস বলেন, ত্রাণকর্মীদের ‘পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু’ করা হয়েছিল। এই ঘটনাটি ওয়ারশ’র নতুন সিভিক কোয়ালিশন সরকার ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। একইসঙ্গে গাজায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় আরও স্বচ্ছতার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও চাপ বাড়ছে।

পোল্যান্ড ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো যৌথ তদন্ত কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং প্রসিকিউটররা বলছেন, ইসরায়েলি প্রমাণ ও সামরিক তথ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ এগোতে পারবে না।