আপনি পড়ছেন

জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতিকে ‘দুঃস্বপ্নের চলচ্চিত্র’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, গাজা উপত্যকায় নারী ও নবজাতকেরা চরম অনাহার, ক্রমবর্ধমান মৃত্যু এবং মাতৃস্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেন।

গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। বিধ্বস্ত বাড়িঘরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন অসহায় ফিলিস্তিনিরা

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপ-নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু সাবেরটন গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে নারী ও শিশুদের পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গাজায় আমি যা দেখেছি, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এই ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতা দেখলে মনে হয়, এটি কোনো দুঃস্বপ্নের চলচ্চিত্রের দৃশ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা বলার আর কোনো ভাষা নেই: গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাইলের পর মাইলজুড়ে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর ধুলো, খুব কম ভবনই অক্ষত আছে। আমি যা দেখেছি, তা ভুলতে পারছি না।’

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার এই সংঘাতে ইউএনএফপিএ-র কর্মীরাও যে ভুক্তভোগী, তা উল্লেখ করে সাবেরটন জানান, গাজা কার্যালয়ের প্রত্যেক কর্মী তাদের এক বা একাধিক আত্মীয়কে হারিয়েছেন এবং প্রায় সবারই বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এরপরও তারা প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন, যেখানে তাদের বিশ্রামের বা পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘গাজার অনেক নারী তাদের সবকিছু হারিয়েছেন।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, মাসিকের সময় নারীরা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার সামগ্রীও পাচ্ছেন না। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো আধা-ভাঙা ভবন বা রাস্তার পাশে ছেঁড়া কাপড়ের তাঁবুতে আশ্রয় নিচ্ছে বলে তিনি জানান।

গাজার খাদ্যসংকট মা ও শিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সাবেরটন বলেন, ‘প্রতি চারজনে একজন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে ১১,৫০০ জন গর্ভবতী নারীও রয়েছেন, যাদের জন্য অনাহার অত্যন্ত বিপর্যয়কর।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘নবজাতকদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই অপরিণত এবং কম ওজনের হয়ে জন্ম নিচ্ছে এবং প্রতি তিনটি গর্ভধারণের মধ্যে একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।’

গাজার ৯৪ শতাংশ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মাতৃমৃত্যুর হার বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেসব ওষুধ মায়েদের জীবন বাঁচাতে পারত, সেগুলো আর পাওয়া যাচ্ছে না।’

সাবেরটন বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি আমাদের মধ্যে এক ঝলক আশার আলো এনেছিল, কিন্তু মাত্র কয়েকদিন পরেই নতুন করে হামলা শুরু হওয়ায় পরিবারগুলো আবারও আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে।’ তিনি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান, যাতে দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুদ্ধবিরতির সময় যে ত্রাণ প্রবেশ করেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পারাপারের স্থানগুলোতে আমাদের আরও অনেক সহায়তা সামগ্রী প্রবেশের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু গাজার উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অঞ্চলের সব নারী ও শিশুর কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে আমাদের সব সীমান্ত খুলে দেওয়া, বাধা দূর করা এবং পূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই মানবিক প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।’

পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘গাজার নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা পরিষেবা’ পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দিয়ে তিনি ‘মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত’ নিরাময়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এটি গাজার তরুণদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যাদের ৭০ শতাংশই হতাশা এবং উদ্বেগে ভুগছে।’ তিনি প্রজন্মগত মানসিক আঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ৫০ শতাংশের বেশি তরুণ এবং প্রায় ৪০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস বা আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপে ভুগবে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেগে যাবে।’

অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিষয়ে সাবেরটন বলেন, সেখানে চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে আনুমানিক ৭৩,০০০ গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘পশ্চিম তীরের জীবনযাত্রা বাধা ও তল্লাশিচৌকি দিয়ে ঘেরা, যা নারী ও তরুণদের চলাচল, পরিকল্পনা এবং আকাঙ্ক্ষার ওপর প্রভাব ফেলছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব আর মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারে না। গাজা থেকে নয়, পশ্চিম তীর থেকেও নয়। প্রকৃত শান্তি অবশ্যই প্রত্যেক নারী ও শিশুর নিরাপত্তা, সমর্থন এবং মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করবে।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.