মিশরকে ৪০০ কোটি ইউরো সহায়তা দিচ্ছে ইইউ

মিশর ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ৪০০ কোটি ইউরোর (৪৬০ কোটি ডলার) একটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই চুক্তি করা হয়। বুধবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত প্রথম মিশর-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

মিশরের রাষ্ট্রীয় তথ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা উপস্থিত ছিলেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ৪০০ কোটি ইউরোর এই সহায়তা প্যাকেজের সমঝোতা স্মারকে মিশরের পক্ষে দেশটির পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী রানিয়া আল-মাশাত এবং ইইউর পক্ষে অর্থনীতি ও উৎপাদনশীলতা বিষয়ক কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।

একই সঙ্গে, ইইউর প্রধান গবেষণা ও উদ্ভাবন তহবিল কর্মসূচি ‘হরাইজন ইউরোপ’-এ মিশরের অংশগ্রহণের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেল আত্তি এবং ইইউর স্টার্টআপ, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক কমিশনার একাতেরিনা জাহারিভা। এছাড়া, মিশরের স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার উদ্যোগে সহায়তার জন্য একটি অর্থায়ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন রানিয়া আল-মাশাত এবং ইইউর গণতন্ত্র ও জনসংখ্যা বিষয়ক কমিশনার দুবরাভকা সুইকা।

২০২৪ সালের মার্চে ঘোষিত কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করার লক্ষ্যেই এই মিশর-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সম্মেলনের পাশাপাশি আয়োজিত এক অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট সিসি ঘোষণা করেন, মিশর ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে’ দাঁড়িয়ে আছে। ইউরোপীয় বিভিন্ন সংস্থা, মিশরীয় প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সামনে তিনি ‘পারস্পরিক লাভজনক বিনিয়োগ অংশীদারত্ব’ স্থাপনের আহ্বান জানান।

সিসি বলেন, মিশর বিভিন্ন কৌশলগত খাতে ‘প্রকৃত সুযোগ’ তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধ ও টিকা, মোটরগাড়ি ও বৈদ্যুতিক যানবাহন, সার ও পেট্রোকেমিক্যাল, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি, মাইক্রোচিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রতিরক্ষা শিল্প এবং লজিস্টিকস অবকাঠামো।

তিনি ‘মিশর ও ইইউর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের গুরুত্বের’ ওপর জোর দিয়ে বলেন, ২০২৪ সালে এই জোটটি ছিল মিশরের শীর্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। দেশটির মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ ইইউর সঙ্গে হয়েছে এবং দেশটিতে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ৩২ শতাংশ এসেছে ইইউভুক্ত দেশগুলোর কোম্পানি থেকে।

প্রেসিডেন্ট সিসি আরও জানান, আফ্রিকান ও আরব দেশগুলোর বাজারে প্রবেশদ্বার হিসেবে মিশরে একটি ইউরোপীয় বিনিয়োগ করিডোর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, ইউরোপীয় সরবরাহ শৃঙ্খলে মিশরকে আরও গভীরভাবে যুক্ত করার বিষয়েও কথা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনটি হঠাৎ করে হয়নি, বরং এটি ২০২৪ সালের মার্চে শুরু হওয়া একটি ক্রমবর্ধমান যাত্রার ধারাবাহিকতা। সে সময় আমরা মিশর-ইইউ সম্পর্ককে একটি সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্বের স্তরে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছিলাম এবং এরপর ২০২৪ সালের জুনে প্রথম মিশর-ইইউ বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।’

মিশরের প্রেসিডেন্সি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট সিসি বেলজিয়ামে আনুষ্ঠানিক সফরের অংশ হিসেবে প্রথম মিশর-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার ব্রাসেলসে পৌঁছান।