যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধবিমান চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত, গাজায় বাহিনী পাঠাতে চায় তুরস্ক

যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ইউরোফাইটার যুদ্ধবিমান কেনার আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে এবং গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে তুরস্ক। বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনার পর ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং উপযুক্ত সময়ে এই বিমান সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চুক্তি চূড়ান্ত হলে সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে। কাতারে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সফরের সময় ইউরোফাইটার চুক্তির বিষয়টি আলোচনায় আসে। সূত্রগুলো আরও জানায়, তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ‘কান’ যুদ্ধবিমান পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা মেটাতে মূলত মিত্র দেশগুলো থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংগ্রহ করা হবে।

একই ব্রিফিংয়ে গাজায় প্রস্তাবিত ‘টাস্কফোর্স’-এ তুর্কি সেনাদের অংশগ্রহণের বিষয়েও কথা বলা হয়। মন্ত্রণালয় জানায়, তুরস্কের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে যেকোনো দায়িত্ব গ্রহণে প্রস্তুত। সূত্রগুলো বলেছে, ‘গাজায় গত দুই বছর ধরে চলমান মানবিক বিপর্যয়ের কারণে সেখানে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এখন প্রধান অগ্রাধিকার।’ এই লক্ষ্যে একটি ‘গাজা টাস্কফোর্স’ গঠনের অংশ হিসেবে একটি বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্র (সিএমসিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর অধীনে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই বাহিনী নিরাপত্তা টহল, বেসামরিক অবকাঠামো রক্ষা, মানবিক সহায়তা প্রদান, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের মতো দায়িত্ব পালন করবে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, ‘পূর্ববর্তী শান্তি অভিযানে অর্জিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার জন্য অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে।’ যুদ্ধবিরতি চুক্তির চারটি জামিনদার দেশের মধ্যে তুরস্ক অন্যতম এবং তারা অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক ও সামরিক পরামর্শ অব্যাহত রেখেছে।

সিরিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানায়, সিরিয়ার সরকার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পুনর্গঠন এবং স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের ১৩ আগস্ট স্বাক্ষরিত যৌথ প্রশিক্ষণ ও উপদেষ্টা সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, সিরীয় সরকারের অনুরোধে দেশটির প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন, পরামর্শ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে এসডিএফ সন্ত্রাসী সংগঠনের একীভূত হওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। তারা জানিয়েছে, তুরস্ক এই প্রক্রিয়াটি ‘নিবিড়ভাবে এবং অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে’ পর্যবেক্ষণ করছে। সূত্রগুলো জোর দিয়ে বলেছে, ‘এসডিএফ সন্ত্রাসী সংগঠনকে অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো কাজ বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে।’ আঙ্কারা ‘এক রাষ্ট্র, এক সেনাবাহিনী’ নীতিতে সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলেও জানানো হয়।