পেত্রো: মার্কিন সহায়তা বন্ধ হলে কিছুই হবে না

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহায়তা বন্ধের হুমকিকে গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, সামরিক সহযোগিতা বন্ধ হলে তা দেশের কার্যক্রমে কিছুটা প্রভাব ফেলবে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

পেত্রো বলেন, ‘সহায়তা বন্ধ করলে কী হবে? আমার মতে, কিছুই না। কারণ এ সহায়তার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সংস্থার মাধ্যমে চলে এবং আমেরিকান নাগরিকদেরই চাকরি দেয়।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘সামরিক সহায়তা বন্ধ হলে কিছু সমস্যা হবে। বিশেষ করে মার্কিন হেলিকপ্টার না থাকলে আমাদের কার্যক্রমে বড় প্রভাব পড়বে।’

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। বুধবার তিনি দেশটিতে সব ধরনের মার্কিন অর্থায়ন বন্ধ রাখার ঘোষণাও দেন।

একসময় পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ সহায়তা গ্রহণকারী দেশ ছিল কলম্বিয়া। তবে এ বছর মার্কিন মানবিক সংস্থা ইউএসএইড-এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সহায়তার পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে, যদিও সামরিক সহযোগিতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেই কলম্বিয়ার মাদকবিরোধী কার্যক্রমকে ‘অসফল’ বলে আখ্যা দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে সহায়তায় আরও কাটছাঁটের ইঙ্গিত দেয়। তা সত্ত্বেও, কিছু মার্কিন সেনা এখনো কলম্বিয়ায় অবস্থান করছে এবং দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যবিনিময় চালু রয়েছে।

পেত্রো সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জাহাজে হামলা চালানোর ঘটনার সমালোচনা করেন, যেখানে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ায় আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়েছিল। আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযানের নিন্দা জানায়।

এর জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পেত্রোকে ‘অবৈধ মাদকনেতা’ এবং ‘খারাপ মানুষ’ বলে অভিহিত করেন। কলম্বিয়া সরকার এই মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এ ঘটনার জেরে পেত্রো ওয়াশিংটনে নিযুক্ত কলম্বিয়ান রাষ্ট্রদূতকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেন। তবে রোববার রাতে তিনি বোগোটায় মার্কিন দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

ট্রাম্প এখনো ১০ শতাংশ শুল্কের বাইরে অতিরিক্ত কোনো কর আরোপের ঘোষণা দেননি, তবে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ‘গুরুতর ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ বিষয়ে পেত্রো মনে করেন, ট্রাম্প সম্ভবত তেল ও কয়লার ওপর শুল্ক আরোপ করবেন না, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে কলম্বিয়ার মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশই এ দুটি পণ্য। তার মতে, অন্য খাতে শুল্ক বাড়লেও বিকল্প বাজার খুঁজে নেওয়া সম্ভব হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির পরিপন্থী। এতদিন বৈধ বাণিজ্যকে মাদকব্যবসা কমানোর উপায় হিসেবে দেখা হতো। নতুন শুল্ক আরোপ করা হলে তা মাদকপাচারকে আরও উসকে দিতে পারে বলে তারা মনে করেন।

পেত্রো জানান, বিদ্রোহী ও অপরাধী চক্র নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তার সরকার গত তিন বছরে রেকর্ড দুই হাজার ৮০০ টন কোকেন জব্দ করেছে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দরগুলোয় অভিযান জোরদার করায় এই সাফল্য এসেছে। পেত্রোর মতে, কলম্বিয়ার আগামী বছরের আইনসভা ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দক্ষিণপন্থীদের শক্তিশালী করাই ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য।