ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা: পশ্চিম তীরকে অঙ্গীভূত করার পরিকল্পনা ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’

অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং মা’লে আদুমিম বসতিকে ইসরায়েলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করার লক্ষ্যে দুটি বিতর্কিত বিলে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সংসদ। এই পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা। বুধবার ইসরায়েলি সংসদে বিল দুটি প্রথম ধাপে পাস হয়।

ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) উপনিবেশ ও প্রাচীর প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান মুয়াইয়াদ শাবান আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইসরায়েলের কোনো সিদ্ধান্ত বা আইন এই ভূমির ফিলিস্তিনি পরিচয় মুছে ফেলতে পারবে না।’ ইসরায়েলি সংসদে প্রথম ধাপে পাস হওয়া বিল দুটি আইনে পরিণত হতে আরও তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তেল আবিব সফর করছেন। এর মাত্র এক মাস আগে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর অঙ্গীভূত করার অনুমতি দেবেন না। এই বিল দুটি আইনে পরিণত হলে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের যে সম্ভাবনা অবশিষ্ট আছে, তা পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।

মুয়াইয়াদ শাবান সতর্ক করে জানান, এই সিদ্ধান্তটি বিপজ্জনক এবং এটি কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধেই নয়, জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন ও প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারদের আরও একবার প্রমাণ করতে আমাদের সমস্ত ভূমিতে উপস্থিত থাকতে হবে যে এই ভূমি আমাদের। কোনো বিবৃতি বা আইন এটি পরিবর্তন করতে পারবে না; মাঠে কী ঘটছে সেটাই আসল বিষয়।’

এই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই চরমপন্থী ইসরায়েলি সরকারকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি বসতি স্থাপনকারী, সরকারি নেতা এবং তাদের সহযোগীদের যেকোনো দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’ ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম দখলের কথা স্মরণ করে শাবান বলেন, ‘তা সত্ত্বেও জেরুজালেমের মিনারগুলো এখনও উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং এর জনগণ প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুই এই ভূমির ফিলিস্তিনি সত্তাকে মুছে ফেলতে পারবে না।’

তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে চলমান সম্প্রসারণবাদের ফল হলো ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা। তিনি উল্লেখ করেন, ‘পশ্চিম তীরের ৭১ শতাংশ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেখানে ৯১২টিরও বেশি সামরিক গেট, তল্লাশি চৌকি এবং ঘাঁটি রয়েছে। এছাড়া জর্ডান উপত্যকার ৩০ শতাংশের বেশি এলাকা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অধীনে।’ শাবান আরও যোগ করেন, ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ইউনিয়ন, রাজনৈতিক দল, স্থানীয় পরিষদ এবং পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে একক ও জোরালো হতে হবে। কৃষকদের তাদের দীর্ঘকাল ধরে দখল হওয়া জমিতে ফিরে যেতে হবে।’

ইসরায়েলি সংসদের ওয়েবসাইট অনুসারে, উগ্র-ডানপন্থী নোয়াম দলের আভি মাওজের উত্থাপিত পশ্চিম তীর অঙ্গীভূতকরণ বিলের পক্ষে ১২০ সদস্যের মধ্যে ২৫ জন ভোট দেন এবং ২৪ জন এর বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে, ডানপন্থী দল ইসরায়েল বেইতেইনুর নেতা আভিগদর লিবারম্যানের জমা দেওয়া মা’লে আদুমিম অঙ্গীভূতকরণ বিলটি ৩২-৯ ভোটে প্রাথমিক অনুমোদন পায়।

জেরুজালেমের পূর্বে অবস্থিত মা’লে আদুমিম পশ্চিম তীরের অন্যতম বৃহৎ ইহুদি বসতি। এটিকে অঙ্গীভূত করা হলে পূর্ব জেরুজালেম তার ফিলিস্তিনি পরিমণ্ডল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং পশ্চিম তীর দুটি বিচ্ছিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে। ফিলিস্তিনিরা বরাবরই দাবি করে আসছে যে, আন্তর্জাতিক প্রস্তাবনা অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেম তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হতে হবে।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক যুগান্তকারী রায়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সমস্ত বসতি খালি করার আহ্বান জানায়।