আপনি পড়ছেন

জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীতে সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদ সংস্কারের জন্য জোরালো দাবি তুলেছে বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সংস্থাটির সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার, অব্যাহত অচলাবস্থা এবং বিশ্বের বড় সংকটগুলো সমাধানে পরিষদের ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘের লোগো

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদকে ‘উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম’ করার আহ্বান জানিয়ে এটি ‘গুরুত্বহীন’ হয়ে পড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করার পর এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, গত ৮০ বছরে জাতিসংঘ সাফল্য এবং ব্যর্থতা—দুটোই দেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে, সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হলো ফিলিস্তিন ইস্যুর কোনো সমাধান না হওয়া, যা সম্ভবত জাতিসংঘের সবচেয়ে পুরোনো বিষয়। সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন এবং এই ভূখণ্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।’ নেবেনজিয়া জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব রাষ্ট্র থেকে বঞ্চিত করার কোনো ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেওয়া যাবে না।

ডেনমার্কের স্থায়ী প্রতিনিধি সান্ড্রা জেনসেন ল্যান্ডি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংস্থাটির উদ্দেশ্য এবং মূলনীতিগুলো এমনভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তিনি ব্যাপক নৃশংসতার সময়ে ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার সীমিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ভেটো ক্ষমতার কারণে আমরা প্রায়ই ব্যাপক মানবিক দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, নৃশংস অপরাধ প্রতিরোধ ও বন্ধ করার ক্ষেত্রে ভেটো যেন কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।’ তিনি গাজা, ইউক্রেন এবং সুদানের চলমান সংঘাতকে ‘মানবতার জন্য কলঙ্ক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই দুর্দশা বন্ধ করতে পরিষদের ব্যর্থতা ‘আমাদের দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার এক ভয়াবহ প্রমাণ’।

গায়ানার পক্ষে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি ক্যারোলিন রডরিগেস-বার্কেট দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার পবিত্র দায়িত্ব পালনে পরিষদ ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি পরিষদের সদস্যদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ক্রমবর্ধমান অক্ষমতার কথা তুলে ধরেন এবং আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য স্থায়ী প্রতিনিধিত্ব সহ স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় বিভাগেই সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

যুক্তরাজ্যের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স জেমস কারিউকি বলেন, পরিষদকে ‘আজকের বিশ্বের জন্য আরও বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক’ করতে লন্ডন স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় শ্রেণিতে সদস্যপদ সংস্কারকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, ‘আমরা আফ্রিকা, জার্মানি, জাপান, ভারত এবং ব্রাজিলের জন্য স্থায়ী সদস্যপদকে সমর্থন করি।’

অন্যদিকে, মার্কিন দূত ডরোথি শেয়া জাতিসংঘকে বিভিন্ন মহাদেশে চলমান যুদ্ধ মোকাবিলায় ‘অক্ষম’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এটি অদক্ষতা, অতিরিক্ত ব্যয় এবং জবাবদিহিতার অভাবে ভারাক্রান্ত একটি বিশাল আমলাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সাধারণ সমস্যা সমাধানে একত্রিত করার পরিবর্তে বিভাজনমূলক মতাদর্শ প্রচারের একটি ফোরামে পরিণত হয়েছে, যা জাতীয় সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে।’

আগামী বছর জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যিনি ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ প্রসঙ্গে শেয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একজন মহাসচিবকে দেখতে চায়, যিনি জাতিসংঘকে তার প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্দেশ্য, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে ফিরিয়ে আনবেন।

স্লোভেনিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি স্যামুয়েল বোগার সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেন, গাজা, সুদানসহ বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের ক্রমবর্ধমান লঙ্ঘন শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়নে সংস্থাটির কয়েক দশকের অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, জাতিসংঘকে অবশ্যই আত্ম-সংস্কার করতে হবে এবং সময়ের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আলজেরিয়ার দূত আমার বেনজামা বলেন, পরিষদকে অবশ্যই আরও বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করতে এর গঠন ও কার্যপদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.