আপনি পড়ছেন

ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত গাজা ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত অধিবেশনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। শুক্রবার দেওয়া সাক্ষ্যে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এটি কোনো সাধারণ ক্ষয়ক্ষতি নয়, বরং একটি প্রজন্মকে হারিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা।

গাজার সাম্প্রতিক ছবি

ফিলিস্তিনি মা আসমা আলবাতাশ শিশুদের শিক্ষার ওপর এই হামলার প্রাথমিক প্রভাব তুলে ধরে বলেন, ‘তারা স্কুলগুলোতে বোমা হামলা ও সেগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে শুরু করে। যুদ্ধ শেষ হলেও স্কুলগুলোতে ফেরা খুব কঠিন হবে।’ ত্রাণকর্মী নাবিল জুমাহ বলেন, তারা ফিলিস্তিনিদের ‘মনন ও দক্ষতাকে’ আক্রমণ করেছে, যা বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার সামিল।

ফিলিস্তিনি গণিতবিদ সেভজান আল-শামি গাজার প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি, যা দখলদারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এর সমস্ত ভবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কেবল ক্ষেপণাস্ত্রগুলোই ভবনটিতে আঘাত হানে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অত্যন্ত পুরোনো কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ছিল, যেখানে লক্ষ লক্ষ বই ছিল।’

আল-শামি আরও জানান, ‘এর সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান। তিনি শহিদ হন। আরও অনেক শিক্ষক ও প্রশাসকও শহিদ হয়েছেন।’

‘আমরা শুধু লিখতে ও পড়তে পারাটাই চাই’

সাংবাদিকরাও এই হামলার ব্যক্তিগত ক্ষতির বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাংবাদিক আবদেলরহমান আল-হিমদিয়াত তার বই, সনদ ও গবেষণাপত্র হারানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি তার গবেষণা ও অ্যাকাডেমিক সম্পদ হারিয়েছেন।

আরেক সাংবাদিক মাহমুদ হানিয়া এর প্রজন্মগত পরিণতির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের বাবা-মা চাইতেন আমরা প্রকৌশলী, চিকিৎসক বা নভোচারী হই। আজ আমরা শুধু একটা জিনিসই চাই। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা যেন লিখতে ও পড়তে পারে। তাদের নিজের নাম লেখা ও পড়তে পারা উচিত।’

শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক ফিদা আল-মাধুন এই হামলার মানবিক ক্ষতির কথা স্মরণ করে বলেন, ‘ফাতিমা আহমেদ নামে একজন ছাত্রী ছিল। সে আমাকে বলেছিল যে আমাদের চারপাশে অনেক সহিংসতা। আমি তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম। কল্পনা করুন, পরের দিনই সে শহিদ হয়।’

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক ইনাস হামদান বলেন, ‘কিছু মানুষ এই বিষয়টি বোঝে না। যে স্কুলগুলোকে আমরা বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতাম, সেগুলো এখন শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ শরণার্থী এখানে রয়েছে।’

ফিলিস্তিনি নাগরিক সুন্দর জাকুত গাজার টিকে থাকার জন্য শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষা। তারা দুই বছর ধরে পড়াশোনা করতে পারেনি। আপনারা জানেন যে গাজায় আমাদের অস্ত্র হলো শিক্ষা। সবচেয়ে জরুরি হলো তাদের শেখা।’

গাজা ট্রাইব্যুনাল

চার দিনব্যাপী এই প্রকাশ্য অধিবেশনটি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত কথিত অপরাধ নথিভুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বছরব্যাপী প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পর্যায়।

শুক্রবার এই ট্রাইব্যুনালে অনাহার, পরিবেশগত গণহত্যা, বাসস্থান ধ্বংস এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা সহ বেসামরিক নাগরিক ও সরকারি অবকাঠামোতে হামলার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ উপস্থাপনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ দূত রিচার্ড ফকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ট্রাইব্যুনালের লক্ষ্য হলো, অংশগ্রহণকারীদের ভাষায় গাজায় চলমান গণহত্যা, বর্ণবাদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের পদ্ধতিগত লঙ্ঘনের একটি বিশদ ‘গণমানুষের নথি’ তৈরি করা। এই ট্রাইব্যুনালের বিবেকী জুরি বোর্ডে রয়েছেন কেনিজ মুরাদ, ক্রিস্টিন চিনকিন, চন্দ্র মোজাফফর, ঘাদা কারমি, সামি আল-আরিয়ান এবং বিলজানা ভ্যাঙ্কোভস্কা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.