ফ্রান্সে বাজেট নিয়ে তুমুল বিতর্ক, অনাস্থা ভোটের হুমকি বামপন্থীদের

ফ্রান্সের ২০২৬ সালের খসড়া বাজেট নিয়ে পার্লামেন্টে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বামপন্থী ও মধ্য-ডানপন্থী দলগুলোর ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মুখে পড়েছে সরকার। শনিবার ফরাসি জাতীয় পরিষদে এ বিতর্ক শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু বাজেটটিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ স্বীকার করলেও ঐক্যের আহ্বান জানান। বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি দেওয়ায় বাজেট পাস নিয়ে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম বিএফএম টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট বিলটি পার্লামেন্টে পাস করাতে হবে সরকারকে। তবে বিরোধী দলগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আটকে দেওয়া বা অনাস্থা ভোটের সূচনা করার মতো পর্যাপ্ত আসন রয়েছে।

সোশালিস্ট পার্টি (পিএস) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, বাজেটে শক্তিশালী পুনর্বণ্টনমূলক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত না করা হলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে। তাদের দাবির কেন্দ্রে রয়েছে ‘জুকম্যান কর’ নামে একটি প্রস্তাব, যেখানে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি সম্পদের ওপর ২ শতাংশ ন্যূনতম কর আরোপের কথা বলা হয়েছে।

লা পেনের ‘জুকম্যান কর’ প্রত্যাখ্যান

ন্যাশনাল র‍্যালি (আরএন) দলের নেত্রী মেরি লা পেন পুনরায় জানিয়েছেন, তার দল এই কর সমর্থন করবে না, এমনকি এর কোনো নমনীয় রূপকেও নয়। ভসগেস অঞ্চল সফরের সময় তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল তখনই এটিকে সমর্থন করব যখন এটি আমাদের প্রস্তাবিত সম্পদ করের সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে, যেখানে মূল বাসস্থানকে করের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যদি সোশালিস্ট পার্টির চাওয়া অনুযায়ী প্রস্তাবটি লেখা হয়, আমরা তা সমর্থন করব না।’

অর্থনীতিবিদ গ্যাব্রিয়েল জুকম্যান, যার নামে এই করের নামকরণ হয়েছে, তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্স ইন্টার রেডিওতে তিনি সতর্ক করে বলেন, একাধিক ছাড়ের ব্যবস্থা থাকলে তা ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনার পুরোনো কৌশলকেই আবার ফিরিয়ে আনবে’। তিনি এই পরিস্থিতিকে ১৯৮১ সালের সঙ্গে তুলনা করেন, যখন ফ্রান্সে সম্পদ কর চালু হলেও ‘কোটিপতিরা কর ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন’।

এই উত্তেজনার মধ্যেও সংসদ সদস্যরা বেশ কিছু সংশোধনী গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ঘাটতি ৩ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত উচ্চ-আয়ের ব্যক্তিদের ওপর ২০ শতাংশ ন্যূনতম কর অব্যাহত রাখা এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ও ভরণপোষণ ভাতার ওপর কর ছাড়ের পরিধি বাড়ানো। সাংবাদিকদের জন্য কর ছাড়ের নিয়মও সংশোধন করা হয়েছে, যেখানে যোগ্যতার জন্য আয়ের সর্বোচ্চ সীমা কমানো হয়েছে।

২০২৬ সালের খসড়া বাজেটে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ৪.৭ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ছোট পৌরসভাগুলো সতর্ক করেছে যে, তহবিলের বিষয়ে সুস্পষ্টতার অভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো থমকে যেতে পারে। পিরেনিস-আটলান্টিকসের একজন মেয়র বলেন, ‘আমরা আমাদের ভর্তুকি নিয়ে নিশ্চিত নই।’ তিনি এরই মধ্যে অবকাঠামো পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন।