ইউরোপে এক ঘণ্টা পেছাচ্ছে ঘড়ির কাঁটা, বিতর্ক ফের তুঙ্গে

ইউরোপজুড়ে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে যাচ্ছে, যা দিবালোক সংরক্ষণ সময়ের সমাপ্তি নির্দেশ করছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বছরে দুবার সময় পরিবর্তনের এই নিয়মটি পুরোপুরি বাতিলের দাবি আবারও জোরালো হয়ে উঠেছে। রবিবার ভোর ৩টায় ইউরোপের সব ঘড়ির কাঁটা ২টায় ফিরিয়ে আনা হবে, যার মাধ্যমে শুরু হবে মানক শীতকালীন সময়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শক্তি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যা কয়েক দশক ধরে ইউরোপীয় জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এ সপ্তাহের শুরুতে জানিয়েছেন, তার সরকার ঋতুভিত্তিক এই সময় পরিবর্তনের নিয়মটি বাতিলের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে। স্প্যানিশ পত্রিকা এল পেইস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, এই ব্যবস্থা শক্তি সাশ্রয়ে তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না এবং মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বেলজিয়ামের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) সাসকিয়া ব্রিকমন্টও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্য ব্রাসেলস টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে এতে শক্তি সাশ্রয়ের পরিমাণ খুবই সামান্য। এর বিপরীতে বছরে দুবার সময় পরিবর্তনের ফলে মানুষের ঘুমের সমস্যা, বিষণ্ণতা এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

২০১৮ সালে ইউরোপীয় কমিশন একটি জনমত জরিপের পর দিবালোক সংরক্ষণ সময় বাতিলের প্রস্তাব করেছিল। সেই জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৮৪ শতাংশই এটি বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। যদিও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ২০১৯ সালে প্রস্তাবটি অনুমোদন করে, কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলো একমত হতে না পারায় এটি এখন পর্যন্ত ইইউ কাউন্সিলে আটকে আছে।

ব্রিকমন্ট বলেন, ‘প্রতিবার সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিতর্ক নতুন করে শুরু হয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলো যদি ৮৪ শতাংশ ইউরোপীয়র মতামতকে সম্মান জানায়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব’।

ইউরোপীয় কমিশনের টেকসই পরিবহন ও পর্যটনবিষয়ক কমিশনার অ্যাপোস্টোলোস জিটজিকোস্টাস বৃহস্পতিবার আইনপ্রণেতাদের জানান, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ঋতুভিত্তিক সময় পরিবর্তনে এখন আর কোনো শক্তি সাশ্রয় হয় না এবং এটি অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করছে। ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি ‘সমন্বিত সমাধান’ খুঁজছে এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই একটি নতুন গবেষণা শুরু করবে।