গবেষণা: গরম-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন শ্রমিকরা, ঝুঁকিতে রপ্তানি খাত
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
তীব্র গরম, অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ও দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়া ও জুতা শিল্পের শ্রমিকরা ব্যাপকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর ফলে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে, উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে এবং রপ্তানি আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এসব শিল্পখাতের ৮২ শতাংশ শ্রমিক তাপজনিত চাপ বা হিট স্ট্রেসে ভুগছেন। দেশের মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশের বেশি আসে পোশাক, চামড়া ও জুতা শিল্প থেকে, যা জিডিপিতে ৮.৭৬ শতাংশ অবদান রাখে। এসব খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও কর্মপরিবেশের অবনতি এসব শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও কর্মদক্ষতা দুটোর ওপরই গভীর প্রভাব ফেলছে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, ২৩.৫ শতাংশ পোশাক কারখানায় উৎপাদন বিলম্বিত হচ্ছে, আর ৮৯.২ শতাংশ জুতা কারখানার শ্রমিকের দক্ষতা কমে গেছে। ফলে অনেক কারখানা উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না। চামড়া শিল্পের ১৭.৩ শতাংশ ও জুতা শিল্পের ৩.২ শতাংশ শ্রমিক নিজেদের উৎপাদন লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।
গবেষণার প্রধান গবেষক ড. মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন তৈরি পোশাক, চামড়া ও জুতা শিল্পের শ্রমিকদের জীবিকা, স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতায় গভীর প্রভাব ফেলছে। অতিরিক্ত তাপ, বাতাসের অভাব ও তাপ-চাপের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে ত্বক ও শ্বাসজনিত সমস্যা, মাথাব্যথা ও মানসিক চাপ বেড়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। নারী শ্রমিকদের মধ্যে পানি ও প্রজননস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতাও বাড়ছে।
গবেষণাটি সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও হেমায়েতপুর শিল্প এলাকায় ৭০০ শ্রমিকের ওপর পরিচালিত হয়, যার মধ্যে ৪০০ জন পোশাক, ১৫০ জন চামড়া ও ১৫০ জন জুতা শিল্পের শ্রমিক। পাশাপাশি ৪৪টি কী-ইনফরম্যান্ট সাক্ষাৎকার (কিআইআই) ৭টি ফোকাস গ্রুপ আলোচনা (এফজিডি) ও ৮টি কেস স্টাডি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এক নারী শ্রমিক বলেন, কারখানায় ঠিকমতো বাতাস ঢোকে না। প্রতিদিনই কেউ না কেউ গরমে অজ্ঞান হয়ে যায়।
প্রায় ৪৯ শতাংশ শ্রমিক ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা কাজ করেন, আর প্রতি চারজনের একজন ১১ ঘণ্টার বেশি সময় শ্রম দেন। এই গরম ও ঘিঞ্জি পরিবেশে ৪৮.৬ শতাংশ শ্রমিক মাথাব্যথা, ত্বকের জ্বালা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
চামড়া খাতের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে মাত্র ২৩ শতাংশ শ্রমিকের কারখানায় কোনো স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে। নারী শ্রমিকদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজনের মাসিক অনিয়মিত এবং প্রতি ছয়জনের একজন গর্ভপাতের ঝুঁকিতে আছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এশিতা বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, গরম, ভিড়, পানির অভাব ও অপুষ্টির কারণে শ্রমিকদের মধ্যে পানিশূন্যতা, রক্তস্বল্পতা, মানসিক চাপ ও ঘুমের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এতে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন ও রপ্তানি আয়েও প্রভাব ফেলছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ শ্রমিক অভ্যন্তরীণ অভিবাসী, যার মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছেন। তবে শহরে এসে তারা নতুন সংকটে পড়েছেন, বাড়িভাড়া, কম মজুরি, সংকীর্ণ বাসস্থান ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
একজন শ্রমিক বলেন, গ্রামে বন্যায় ফসল নষ্ট হলে খাবারের দাম বেড়ে যায়, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ে না।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার আছে, ২০ শতাংশেরও কমে পর্যাপ্ত পানি ব্যবস্থাপনা এবং মাত্র ১৩ শতাংশ কারখানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ৪০ শতাংশের বেশি শ্রমিক কোনো সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নেই, আর মাত্র ১০ শতাংশের স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকদের অসুস্থতা ও উৎপাদন ব্যাহত হলে রপ্তানি আয়ও ঝুঁকিতে পড়বে। একজন শ্রমনীতি বিশ্লেষক বলেন, শ্রমিক অসুস্থ হলে উৎপাদন কমে যায়, অথচ গোটা শিল্পই তাদের শ্রমের ওপর নির্ভরশীল।
সাভারের এক কারখানা মালিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। শ্রমিকরা কষ্ট পাচ্ছে, উৎপাদনও কমছে। আমরা শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধান গবেষক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কারখানাগুলোকে আরামদায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং ‘জাস্ট ট্রানজিশন’-এর সময় শ্রমিক যেন চাকরি বা অধিকার না হারান, তা দেখতে হবে। সরকারকে নীতিগত প্রণোদনা ও কার্যকর মনিটরিং দিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের দক্ষতা ও অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.