যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা: বিমান চলাচল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সরকারি অচলাবস্থার কারণে দেশটির বিমান চলাচল ব্যবস্থা তীব্র কর্মী সংকটের মুখে পড়েছে এবং নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে অবসাদ বাড়ছে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি। অচলাবস্থার ফলে সামনে আরও ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর জন্য তিনি ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেছেন।

রবিবার একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে শন ডাফি জানান, শনিবার বিমান চলাচল ব্যবস্থায় কর্মী সংকট-সংক্রান্ত ২২টি সতর্কবার্তা পাওয়া গেছে, যা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘অচলাবস্থা শুরুর পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ সতর্কবার্তার ঘটনাগুলোর একটি। এটি প্রমাণ করে যে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রকরা ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।’

ডাফি আরও জানান, বহু নিয়ন্ত্রক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিচ্ছেন এবং অনেক সরকারি কর্মী বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য মৌলিক খরচ মেটাতে দ্বিতীয় চাকরি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অচলাবস্থা শেষ হলে বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে তিনি নিয়ন্ত্রকদের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।

পরিবহন সচিব এই অচলাবস্থার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করে বলেন, ‘যাত্রীদের সামনে আরও ভোগান্তি অপেক্ষা করছে। বিমানবন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্মী সংকট বাড়বে, যার ফলে আরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত ও বাতিল হবে। তখন মার্কিন নাগরিকরা ডেমোক্র্যাটদের ওপর হতাশ হয়ে বলবে, সরকার খুলে দিন।’

‘দ্য ওয়াশিংটন টাইমস’-এর তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা তহবিল নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে এই অচলাবস্থা শুরু হওয়ায় লাখ লাখ সরকারি কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ সতর্ক করেছে, অচলাবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে ‘সম্পূরক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি’র সুবিধাভোগীরা অনুদান থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বেতনও আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা এই অচলাবস্থার জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করছেন। প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিস সরকার সচল করতে এবং ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে দ্বিদলীয় আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে কোষাধ্যক্ষ সচিব স্কট বেসেন্ট ডেমোক্র্যাটিক নেতা চার্লস শুমার ও হাকিম জেফরিসের অবস্থানকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করেছেন। ওয়াশিংটনে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাশ যাত্রীদের উদ্দেশে ডাফি সরাসরি বলেন, ‘চার্লস শুমারকে ফোন করুন।’

উল্লেখ্য, গত ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর এই অচলাবস্থা শুরু হয়। এরপর থেকে হাজার হাজার সরকারি কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বা তারা বেতন ছাড়াই কাজ করছেন এবং বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা সীমিত বা স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থাটি হয়েছিল ২০১৯ সালে, যা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল।