মার্কিন যুদ্ধজাহাজ: ত্রিনিদাদের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা স্থগিত করল ভেনেজুয়েলা

মার্কিন যুদ্ধজাহাজকে নিজেদের বন্দরে নোঙর করার অনুমতি দেওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভেনেজুয়েলা। ‘শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির সঙ্গে জ্বালানি খাতে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে কারাকাস। এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ত্রিনিদাদের নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ‘ইউএসএস গ্রাভলি’ দ্বীপদেশটিতে নোঙর করে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা মাদকবাহী দ্রুতগামী নৌযান আটক করার উদ্দেশ্যে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে কারাকাস বিষয়টিকে ‘সরাসরি উস্কানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং ত্রিনিদাদ সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই যৌথ মহড়া তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।

জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ভেনেজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ বলেন, ‘ত্রিনিদাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।’ দেশের হাইড্রোকার্বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা রদ্রিগেজ আরও জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সীমান্তবর্তী জলসীমায় যৌথ গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তি থেকে সরে আসার সুপারিশ করবেন। ভেনেজুয়েলা ও ত্রিনিদাদের মধ্যে মাত্র ১১ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি উপসাগর রয়েছে।

এদিকে ত্রিনিদাদের প্রধানমন্ত্রী কামলা প্রসাদ-বিসেসার যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযানের পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি চান না মাদক পাচারকারীরা তার দেশের নাগরিকদের হত্যা করুক, বরং তিনি চান তারাই যেন ‘খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়’।

ভেনেজুয়েলার জলসীমায় অবস্থিত আলোচিত ড্রাগন গ্যাস প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকে আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ত্রিনিদাদকে এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দিলেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ কারাকাস। ভেনেজুয়েলা জানিয়েছে, এই গ্যাস পেতে হলে ত্রিনিদাদকে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে সম্প্রতি স্থানীয় এক পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে ত্রিনিদাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশের ভেনেজুয়েলার গ্যাসের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ ভেনেজুয়েলার ওপর নির্ভর করে না এবং কখনও করেনি।’

কারাকাসের অভিযোগ, এই অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে নিজেদের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরীসহ একাধিক যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচারের সন্দেহে অন্তত ১০টি নৌযানে হামলা চালিয়েছে, যাতে কমপক্ষে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।