আপনি পড়ছেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার অধীনে গাজায় বিদেশি বাহিনী মোতায়েন করা হলে কোনো দেশই ‘শান্তি চাপিয়ে দেওয়ার’ মতো ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হবে না বলে সতর্ক করেছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিবিসি প্যানোরামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান। তার মতে, এ ধরনের মিশনের পরিবর্তে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হলে দেশগুলো তা বিবেচনা করতে পারে।

জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ

সাক্ষাৎকারে বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, ‘গাজার ভেতরে নিরাপত্তাবাহিনীর কার্যপরিধি কী হবে? আমরা আশা করি, সেটা হবে শান্তিরক্ষা। কারণ যদি সেটা ‘শান্তি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়’ হয়, তাহলে কেউই এতে যুক্ত হতে চাইবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শান্তিরক্ষার মানে হলো আপনি সেখানে স্থানীয় পুলিশ ও ফিলিস্তিনি বাহিনীকে সমর্থন দেবেন। জর্ডান ও মিশর তাদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তুত, তবে এতে সময় লাগবে। কিন্তু অস্ত্র হাতে গাজা জুড়ে টহল দেওয়ার দায়িত্ব কোনো দেশই নিতে চাইবে না।’

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘শান্তি চাপিয়ে দেওয়া’ বলতে বলপ্রয়োগসহ বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে, ‘শান্তিরক্ষা’ কার্যক্রম সংঘাতে লিপ্ত পক্ষগুলোর সম্মতিতে পরিচালিত হয়, যেখানে শান্তিরক্ষীরা কেবল আত্মরক্ষা বা দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে।

ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী, আরব দেশসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের গাজায় একটি স্থিতিশীলতা বাহিনী পাঠাতে হবে। এই বাহিনী বাছাই করা ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে এবং এক্ষেত্রে জর্ডান ও মিশরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এই পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার শর্তও রাখা হয়েছে।

বাদশাহ আবদুল্লাহ স্পষ্টভাবে জানান যে, জর্ডান গাজায় কোনো বাহিনী পাঠাবে না, কারণ তার দেশ এই বিষয়ের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জর্ডানের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এবং দেশটি গত কয়েক দশকে ইসরায়েলি হামলা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।

হামাস রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জর্ডানের বাদশাহ বলেন, ‘আমি তাদের চিনি না। তবে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা কাতার ও মিশর এ ব্যাপারে আশাবাদী।’

গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিমান থেকে নিচে তাকিয়ে যে দৃশ্য দেখেছি, তা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। গাজার ওই অংশের ধ্বংসযজ্ঞ আমাকে স্তম্ভিত করেছে। আমরা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, কীভাবে এই বিপর্যয় ঘটতে দিচ্ছি, তা সত্যিই আমার বোধগম্য নয়।’

একই অনুষ্ঠানে জর্ডানের রানি রানিয়াও এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে ব্যর্থতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে অভিভাবক হিসেবে কেমন অনুভূতি হয় জানেন? সন্তানদের কষ্ট পেতে দেখা, ক্ষুধা ও আতঙ্কে কাঁপতে দেখা, আর কিছুই করার ক্ষমতা না থাকা। পৃথিবী সব দেখে, কিন্তু কিছুই করে না। এটি প্রতিটি অভিভাবকের দুঃস্বপ্ন, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি গত দুই বছরের প্রতিদিনের বাস্তবতা।’

স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে রানি বলেন, ‘আশা নিছক সরলতা নয়, বরং এটা দৃঢ় প্রতিরোধের একটি রূপ।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা পাশাপাশি থাকতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড বিদ্বেষ, রাগ, শোক ও সংশয় জমে আছে। তাই নিজেদের উদ্যোগে এখনই শান্তি সম্ভব না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় দুই বছরের গণহত্যায় প্রায় ৬৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তাদের হামলায় আহত হয়েছে আরও এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ এবং উপত্যকার অধিকাংশ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.