মধ্য আফ্রিকায় শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি, তবে বাজেট সংকটের আশঙ্কা

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে (সিএআর) শান্তি প্রক্রিয়া নতুন করে গতি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের শীর্ষ দূত। গত এপ্রিলে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, আসন্ন বাজেট ঘাটতির কারণে এই অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক বক্তব্যে সিএআরের জন্য নিযুক্ত মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি ভালেন্তিন রুগওয়াবিজা এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার এবং দেশের দুটি সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চাদের মধ্যস্থতায় গত ১৯ এপ্রিল স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকে শান্তি প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্য গতি পেয়েছে।’

রুগওয়াবিজা, যিনি মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (মিনাসকা) প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, জানান যে এপ্রিলের চুক্তি বাস্তবায়ন এবং নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রমের ফলে দেশের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট, আইনসভা, আঞ্চলিক ও পৌর নির্বাচনগুলো দেশে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রসারিত ও সংহত করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হবে।

দেশের কিছু অংশে উন্নতির কথা উল্লেখ করলেও রুগওয়াবিজা সতর্ক করে বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। প্রতিবেশী দেশ সুদানের সংঘাতের প্রভাব সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সুদানি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সীমান্ত অতিক্রম করে অনুপ্রবেশের ঘটনাও বেড়েছে।’

মিশনের আর্থিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের আসন্ন ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য বেসামরিক ও উর্দিধারী কর্মীদের সংখ্যা কমানো হবে এবং কিছু কার্যক্রম সীমিত করা হবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সময়ে পরিষদের দেওয়া দায়িত্ব পালনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।’ রুগওয়াবিজা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মিনাসকার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে মুসলিম বিদ্রোহী জোট ‘সেলেকা’ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া বোজিজেকে ক্ষমতাচ্যুত করলে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ‘অ্যান্টি-বালাকা’ নামে পরিচিত খ্রিস্টান মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো সংগঠিত হলে দেশটি দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে মিনাসকা মিশন মোতায়েন করে।

অবিরাম অস্থিরতা সত্ত্বেও, ফাউস্তিন আর্চেঞ্জ তোয়াডেরা ২০১৫ এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন। যদিও সে সময়ও দেশের বিভিন্ন অংশ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০১৯ সালের শুরুতে সরকার ও ১৪টি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা টেকেনি এবং ২০২১ সালে বেশিরভাগ বিদ্রোহী গোষ্ঠী পুনরায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।