স্কুল ভর্তি: পরীক্ষা না লটারি, সিদ্ধান্তেহীনতায় বাড়ছে বিশৃঙ্খলা

সারাদেশে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির মৌসুম শুরু হলেও ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র অনিশ্চয়তা। ভর্তি পরীক্ষা হবে, নাকি লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে, সে বিষয়ে সরকারি কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় স্কুলগুলো নিজেদের মতো করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। কোথাও ভর্তি পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে ফরম বিক্রি হচ্ছে, আবার কোথাও লটারির কথা বলা হচ্ছে। এতে চরম বিভ্রান্তি ও ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো অভিভাবক।

রাজধানীর ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলোতে চলছে ফরম বিক্রির হিড়িক। এজন্য স্কুলভেদে অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিন্তু ফরম কিনলেও ভর্তি প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন তারা। অনেক নামকরা স্কুলে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ফরম কেনার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যা অভিভাবকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।

এই অনিশ্চয়তাকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে কোচিং সেন্টার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো। অনেক কোচিং সেন্টার ‘ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে’ এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে অভিভাবকদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করছে। বাড়তি প্রস্তুতি, মক টেস্ট এবং ডামি ভর্তি পরীক্ষার নামে চলছে জমজমাট বাণিজ্য। এমনকি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ‘সফল ভর্তির কৌশল’ বা ‘সাজেশন’ বিক্রির মতো ঘটনাও ঘটছে, যা অভিভাবকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

অন্যদিকে, লটারি পদ্ধতির বদলে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, লটারি পদ্ধতি শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর এবং এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তারা জানান, এই পদ্ধতি বহাল থাকলে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাবর্ষে ৬৮০টি সরকারি স্কুলে আসন রয়েছে মাত্র এক লাখ নয় হাজার। গত বছর এসব আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছিল প্রায় ছয় গুণ বেশি, অর্থাৎ ছয় লাখ ২৫ হাজার। অন্যদিকে, চার হাজার ৯৪৫টি বেসরকারি স্কুলে ১০ লাখ আট হাজার আসন থাকলেও আবেদন কম পড়ায় সাড়ে ছয় লাখ আসন ফাঁকা ছিল। এতে সরকারি স্কুলে ভর্তির তীব্র প্রতিযোগিতা স্পষ্ট।

এবারের ভর্তি নীতিমালায় বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম থাকলেও সহোদর কোটা ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ বা ২০ শতাংশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও আলোচনা চলছে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা যাচাইয়ে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক থাকবে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভর্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে বুধবার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক ড. খান মঈনুদ্দীন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, ‘বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে বর্তমান পদ্ধতি বহাল থাকবে কি না। এর আগে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’