লেবাননের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টার প্রশংসা যুক্তরাষ্ট্রের

লেবাননে সব অস্ত্রশস্ত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের (ইউনিফিল) আয়োজনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বহুপক্ষীয় বৈঠকে এই প্রশংসা করা হয়।

বুধবার বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, দক্ষিণ লেবাননের নাকুরায় ‘পেন্টাল্যাটারাল’ ব্যবস্থার আওতায় আয়োজিত ১২তম অধিবেশনে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি বজায় রাখা এবং নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টায় লেবাননি সেনাবাহিনীর অগ্রগতি পর্যালোচনা করাই ছিল এই বৈঠকের উদ্দেশ্য।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধের পর এই ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এর অধীনে ইউনিফিল, লেবানন, ইসরায়েল, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে। ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি পর্যবেক্ষণ করাই এই ব্যবস্থার প্রধান কাজ।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এই ব্যবস্থার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোসেফ ক্লিয়ারফিল্ড, মার্কিন পরামর্শক মরগান ওরটাগাস এবং অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদলের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা। বিবৃতিতে বলা হয়, সব সদস্য লেবাননের স্থিতিশীলতার প্রতি তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ভবিষ্যৎ অধিবেশনের সময়সূচি চূড়ান্ত করতে সম্মত হয়েছেন। বছরের শেষ নাগাদ পরবর্তী চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

মার্কিন পরামর্শক মরগান ওরটাগাস জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বছরের শেষ নাগাদ সব অস্ত্রশস্ত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে লেবানন সরকারের সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানায়। তিনি আরও বলেন, লেবাননি সেনাবাহিনীকে এখন অবশ্যই তাদের পরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোসেফ ক্লিয়ারফিল্ড সাম্প্রতিক অভিযানগুলোতে লেবাননি সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি জানান, জলপাই ফসল তোলার জন্য নিরাপত্তা প্রদান থেকে শুরু করে ক্ষতিকারক গোষ্ঠীগুলোর ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ স্থাপনা খুঁজে বের করা ও নিষ্ক্রিয় করার মতো বিভিন্ন জটিল অভিযানে তিনি সেনাবাহিনীর দক্ষতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। ক্লিয়ারফিল্ডের মতে, ‘লেবাননি সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাদের কর্মকাণ্ড লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি এবং দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় তাদের দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন ঘটায়।’

অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা মোকাবিলা করার উপায় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, শান্তি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার সম্মিলিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ সব অধিবেশনে এই লঙ্ঘনগুলো পর্যবেক্ষণ এবং তা হ্রাস করার বিষয়টি একটি স্থায়ী আলোচ্যসূচি হিসেবে থাকবে।

উল্লেখ্য, গত আগস্টে লেবানন সরকার দেশের সব অস্ত্রশস্ত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে। তবে হিজবুল্লাহ এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে এবং জোর দিয়ে জানায় যে, দক্ষিণের পাঁচটি অধিকৃত সীমান্ত ফাঁড়ি থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না।

এই বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন ইসরায়েল সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লেবাননে তার হামলা বাড়িয়েছে। এর মধ্যে হিজবুল্লাহ সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হত্যা এবং দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে তীব্র বোমাবর্ষণ অন্তর্ভুক্ত।

২০২৪ সালের নভেম্বরের অস্ত্রবিরতি চুক্তি অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করেছে এবং পাঁচটি সীমান্ত ফাঁড়িতে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে।