‘ভুতুড়ে শহর’ হওয়ার শঙ্কায় ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাজধানী নুসানতারা

ইন্দোনেশিয়ার যানজটপূর্ণ ও ডুবে যেতে থাকা রাজধানী জাকার্তার বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হচ্ছিল পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ-নগরী নুসানতারা। তবে বর্তমানে এই শহরটি একটি ‘ভুতুড়ে শহরে’ পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলত অর্থায়ন সংকট, নির্মাণকাজে ধীরগতি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের স্থানান্তরে স্থবিরতার কারণে এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বোর্নিও দ্বীপের পূর্ব কালিমানতানের গভীর জঙ্গলে অবস্থিত নুসানতারা প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন চোখে পড়ার মতো কমে গেছে। প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর অধীনে ২০২৪ সালে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ২০০ কোটি পাউন্ড বা ২৪০ কোটি ডলার থাকলেও ২০২৫ সালে তা কমে ৭০ কোটি পাউন্ড বা ৮৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আগামী বছরের জন্য মাত্র ৩০ কোটি পাউন্ড বা ৩৬.৫ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের দাবিকৃত অর্থের এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া, বেসরকারি বিনিয়োগও লক্ষ্যের চেয়ে ১০০ কোটি পাউন্ড বা ১২২ কোটি ডলারের বেশি কম রয়েছে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রেসিডেন্ট প্রাবোও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিদর্শনে যাননি। গত মে মাসে তিনি নীরবে নুসানতারাকে একটি ‘রাজনৈতিক রাজধানী’ হিসেবে পুনর্নির্ধারণ করেন, যা সেপ্টেম্বরে প্রকাশ্যে আসে।

শহরটিতে বর্তমানে মাত্র ২ হাজার সরকারি কর্মকর্তা এবং ৮ হাজার নির্মাণশ্রমিক বাস করেন, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১২ লাখ জনসংখ্যার লক্ষ্যের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। যদিও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ভবন, সড়ক, হাসপাতাল এবং একটি প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছে, শহরের বেশিরভাগ অংশই এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।

এসব সত্ত্বেও, নুসানতারা রাজধানী কর্তৃপক্ষের প্রধান বাসুকি হদিমুলজোনো এই প্রকল্পের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি জানান, ‘অর্থায়ন আছে, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও আছে। আমরা কেন সন্দেহ করব?’ তিনি দাবি করেন, বাজেট বরাদ্দ কমানো হয়নি, বরং ‘পুনর্বণ্টন’ করা হয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্ট প্রাবোও-এর ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট প্রকল্পটি ‘আরও দ্রুত শেষ করার’ কথা দিয়েছেন।

তবে নুসানতারার আশেপাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাজের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। স্থানীয় দোকানদার দেউই আসনাওয়াতি বলেন, ‘এখন আমার আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে’। আরেক দোকানদার শ্যারারিয়ার মতে, নির্মাণশ্রমিকরা চলে যাওয়ায় ব্যবসার অবস্থা খারাপ হয়েছে।

পরিবেশবাদী এবং আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ‘ওয়ালহি’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা জানিয়েছে, এই প্রকল্পের কারণে ২ হাজার হেক্টরের বেশি ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস করা হয়েছে। বালিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলছেন, পানি দূষণ ও বন্যার প্রকোপ বাড়ায় তাদের ফসল উৎপাদন কমেছে এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও সমালোচকদের মতে, নুসানতারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি করেছে।

এমনকি দর্শনার্থীরাও শহরের এই অদ্ভুত নীরবতা টের পাচ্ছেন। সুলাওয়েসি থেকে আসা ক্লারিজা নামের এক পর্যটক বলেন, ‘এটি সিঙ্গাপুরের মতো মনে হয়। পরিষ্কার, আধুনিক—কিন্তু এটি অদ্ভুত এবং নীরবও। এখানে এখনো কেউ নেই’।