ঐকমত্যের আহ্বান সাকির, অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা জাসদের, পিআর চায় জামায়াত

দেশের রাজনৈতিক উত্তরণ, আসন্ন নির্বাচন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে শুক্রবার রাজধানী ঢাকার পৃথক তিনটি অনুষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান ও উদ্বেগ তুলে ধরেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গণসংহতি আন্দোলন জাতীয় ঐকমত্যের ওপর জোর দিলেও বাংলাদেশ জাসদের আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করা হয়। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিবর্তনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবি জানিয়েছে।

গণসংহতি আন্দোলনের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি রাজনৈতিক উত্তরণের জন্য ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, অভ্যুত্থান একটি সম্মিলিত সংগ্রাম ছিল, তাই কোনো একক দল রাষ্ট্রের ওপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইলে সংঘাত সৃষ্টি হবে, যা পতিত ফ্যাসিস্টদের সুবিধা করে দেবে। তিনি বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংবিধান বদলায় না। জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া কোনো সংস্কার টেকসই হয় না। কাজেই সংস্কারকে বাস্তবায়ন করার জন্য নির্বাচন লাগবে’। সাকি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ক্ষমাকাঠামো শাসকদের স্বৈরতন্ত্রী হতে সাহায্য করে এবং ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে যে ওই কাঠামো দিয়ে দেশ আর এগোতে পারবে না।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এই সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের সৃষ্ট সংকট কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটা গুণগত মানসম্পন্ন নির্বাচন করতে হবে’। অনুষ্ঠানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

অন্যদিকে, জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাসদের ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন বিভিন্ন দলের নেতারা। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না, তাহলে সুষ্ঠু ন্যায় বিচারও সম্ভব না’। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সংস্কার ছাড়া ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে ন্যায়বিচার কীভাবে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিদেশি মনোনীত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের আলোচনার নামে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনের আগে গণভোটের ধারণার বিরোধিতা করে বলেন, ‘সব বাদ দিয়ে ইলেকশনটা দিয়ে দেন’।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ অভিযোগ করেন, কিছু ছাত্রনেতা ‘সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধকে বাতিল করে’ দিয়ে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনের মতো কথা বলছেন, যা তাদের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপেক্ষা করে কোনো ষড়যন্ত্র হলে অন্তর্বর্তী সরকার ‘মীরজাফর হিসেবে আখ্যায়িত হবে’।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘আজ যারা সংস্কার কথা বলে মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ করে ক্ষমতায় যাওয়ার কথা বলে তাদের উদ্দেশ্যে বলব, এই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ থাকবে, জয় বাংলা থাকবে, বঙ্গবন্ধু থাকবে’।

এদিকে, ভিন্ন একটি কর্মসূচিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মিরপুরে একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেবো; যাকে খুশি তাকে দেবে’ এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রয়োজন। এই দাবি আদায়ে তিনি সবাইকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ভোটচুরি ও কেন্দ্র দখলের মতো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি জনগণ আর দেখতে চায় না।