ল্যুভরের চুরি: ‘এখনও সময় আছে, আমাদের গয়না ফিরিয়ে দিন’

ল্যুভর জাদুঘর থেকে শত কোটি ডলার মূল্যের রাজকীয় গয়না চুরির ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, চুরি যাওয়া অমূল্য রত্নগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চোরদের প্রতি আবেগঘন আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী কাউন্ট অব প্যারিস জ্যাঁ দ’ অর্লেয়ান। এটি প্যারিসের বিখ্যাত এই জাদুঘরে শতবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা।

রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি চোরদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখনও সময় আছে। আমাদের গয়না ফিরিয়ে দিন। এটা কেবল জাতীয় ঐতিহ্যের প্রশ্ন নয়, আমাদের পরিবারের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত একটি বিষয়।’ প্যারিস থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত দ্র্যু রাজপ্রাসাদে বসে তিনি এই আবেগময় আহ্বান জানান।

সাক্ষাৎকারের সময় ৬০ বছর বয়সি এই কাউন্টের হাতে ছিল পরিবারের পুরোনো কিছু ছবি। একটি ছবিতে তার প্রপিতামহী, ডাচেস অব গুইজকে ১৯৩১ সালে বিখ্যাত নীলা ও হীরার টিয়ারা পরা অবস্থায় দেখা যায়। অন্য একটি ছবিতে তার দাদি ইসাবেল দ’অর্লেয়ান-ব্রাগানসকে ১৯৮৪ সালে বেলজিয়ামের প্রিন্সেস অ্যাস্ট্রিডের বিয়েতে শেষবারের মতো সেই টিয়ারা পরে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এর পরের বছরই তার দাদু রাজকীয় অলংকারটি ৫০ লাখ ফ্রাঁর বিনিময়ে ল্যুভর জাদুঘরের কাছে বিক্রি করে দেন।

গত ১৯ অক্টোবর দিনের আলোয় ঘটে যাওয়া এই চুরির ঘটনায় ল্যুভর থেকে ১৯ শতকের আটটি রাজকীয় গয়না নিয়ে যায় চোরেরা। প্রকাশ্য দিবালোকে নিরাপত্তার এমন ব্যর্থতায় পুরো ফ্রান্সে ক্ষোভ বাড়ছে। ১৯১১ সালে মোনালিসা চুরির পর ল্যুভরে এটিই সবচেয়ে বড় ডাকাতির ঘটনা। পুলিশ ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও অলংকারগুলো এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

চুরি যাওয়া আটটি অলংকারের মধ্যে রয়েছে রানি মারি-আমেলি ও রানি হর্তঁসের নীলার সেটের টিয়ারা, হার ও একটি কানের দুল, সম্রাজ্ঞী ইউজেনির টিয়ারা ও ব্রোচ এবং নেপোলিয়নের বিয়ের উপহার হিসেবে দেওয়া সম্রাজ্ঞী মারি লুইজের পান্নার হার ও একজোড়া কানের দুল।

কাউন্ট দ’অর্লেয়ান অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের জন্য এবং ফরাসি জনগণের জন্য এই রত্নগুলো আবার ল্যুভরের প্রদর্শনীতে ফিরিয়ে আনা জরুরি।’ তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এগুলো প্রদর্শনের জন্য একটি নতুন ও নিরাপদ কক্ষ নির্মাণ করা উচিত। একই সঙ্গে এই চুরির ঘটনায় যারা নিরাপত্তায় অবহেলা করেছেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এই ঘটনার প্রতি জনসাধারণের আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়াকে কাউন্ট দ’অর্লেয়ান ২০১৯ সালের নটর ডেম ক্যাথেড্রালে অগ্নিকাণ্ডের পর সৃষ্ট জাতীয় শোকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো অমূল্য ঐতিহ্য। আমাদের অবশ্যই সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে।’