প্রতি বছর ২৫ হাজার টন প্লাস্টিক সাগরে ফেলে বাংলাদেশ
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
প্রায় দুই দশক আগে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পরও প্লাস্টিক বর্জ্য সংকট থেকে মুক্তি পায়নি বাংলাদেশ। বাজারের ব্যাগ থেকে শুরু করে খাবারের মোড়ক- অধিকাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যই শেষ পর্যন্ত নদী ও সাগরে গিয়ে মিশছে, যা এখন বৈশ্বিক সামুদ্রিক দূষণের বড় এক উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্রিনম্যাচের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সমুদ্র প্লাস্টিক দূষণে এশীয় দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী, মোট সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্যের ৮১ শতাংশই এ অঞ্চল থেকে আসে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ দশ দূষণকারী দেশের একটি, যেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে প্রবাহিত হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বার্ষিক সর্বাধিক দূষণকারী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফিলিপাইন (৩ লাখ ৬০ হাজার টন), এরপর ভারত (১ লাখ ৩০ হাজার টন), মালয়েশিয়া (৭৩ হাজার টন), চীন (৭১ হাজার টন), ইন্দোনেশিয়া (৫৬ হাজার টন), মিয়ানমার (৪০ হাজার টন), ব্রাজিল (৩৮ হাজার টন), ভিয়েতনাম (২৮ হাজার টন), বাংলাদেশ (২৫ হাজার টন) এবং থাইল্যান্ড (২৩ হাজার টন)।
প্রতিবেদনটি আরও জানায়, বর্তমানে ৭৫ থেকে ১৯৯ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক ইতিমধ্যেই বিশ্ব মহাসাগরে জমা হয়েছে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, খাদ্যনিরাপত্তা ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশের প্লাস্টিক লাইফসাইকেল নিয়ে গবেষণা করা পিএইচডি গবেষক শরিফ মুসতাজিব বলেন, দুর্বল তদারকিই বাংলাদেশের প্লাস্টিক দূষণের অন্যতম কারণ।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য বিভিন্ন পথ ধরে সাগরে পৌঁছায়। কোনো সঠিক তথ্য নেই, সিটি করপোরেশনগুলো প্লাস্টিককে সাধারণ বর্জ্য হিসেবে বিবেচনা করে। পরিবেশ অধিদপ্তর উৎপাদন ও অনুমোদনের লাইসেন্স দেয়, কিন্তু তদারকি করে না। চিপস প্যাকেট, বোতল বা পলিথিন পুনর্ব্যবহার করার সক্ষমতাও আমাদের নেই।
গ্রিনম্যাচের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মানুষের খাদ্যতালিকায় ব্যবহৃত মাছের ৬০ শতাংশে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এ কণাগুলো মানুষের শরীরে ঢুকে ক্যানসার, বন্ধ্যাত্ব, ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
একজন ব্যক্তি বছরে গড়ে ২ লাখ ১১ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শরীরে গ্রহণ করেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো মানুষের ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, এমনকি মস্তিষ্কেও পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় সমুদ্র দূষণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক শাহ নওয়াজ চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত জাল বা ‘ঘোস্ট নেট’ এখন মারাত্মক পরিবেশগত হুমকি।
এই জালগুলো সমুদ্রের তলদেশে পড়ে থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয় এবং মাছের মাধ্যমে খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে। এর ফলে ক্যানসার, হরমোনজনিত সমস্যা ও বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ে, বলেন তিনি।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের উপকূলে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার টন জেলেদের প্লাস্টিক জাল ব্যবহার হয়, যার প্রায় ৭ শতাংশ সাগরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের ভোগের মাত্রা বাড়ছে, কিন্তু ব্যবস্থাপনা তেমন উন্নত হয়নি। পলিথিন নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবায়ন ছিল দুর্বল। সম্প্রতি র্যাবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে প্রয়োগ শক্তিশালী হয়।
তিনি বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সুপারমার্কেট ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে।
ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
তবে বাস্তবে এখনো দেশের প্রতিটি বাজার, খাবারের দোকান ও পাড়ায়-পাড়ায় পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপক।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা ও রিসাইক্লিং প্রযুক্তির ঘাটতির কারণে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.