ডিএমটিসিএল এমডি: ঢাকার মেট্রোরেল চালুর আগে হয়নি নিরাপত্তা নিরীক্ষা

ঢাকার মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ।

ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর, সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে উত্তরা দিয়াবাড়িতে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

ফারুক আহমেদ বলেন, মেট্রোরেল চালুর আগে কোনো সেফটি অডিট হয়নি। এখন আমরা পূর্ণাঙ্গ সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত সম্ভব তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (থার্ড পার্টি) এই অডিট করানো হবে। ইতোমধ্যে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকেই এই কাজের দায়িত্ব দিতে চাই।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটি এমন জিনিস নয় যে হঠাৎ ভেঙে পড়বে। তদন্ত চলছে, তাই এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চাই না। তবে সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ডিজাইন ত্রুটি, সঠিকভাবে ইনস্টল না করা, কিংবা যাদের বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাদের গাফিলতি।

দোষ কিন্তু বিয়ারিং প্যাডের নয়, দোষ তাদের, যারা লাগিয়েছে কিংবা ঠিকভাবে বুঝে নেয়নি বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছিল। ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। কিন্তু অনেক জায়গায় তাড়াহুড়ো হয়েছে। ফলে কিছু অংশ এখনো আমরা পুরোপুরি বুঝে নিতে পারিনি।

ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ-আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।

এ প্রসঙ্গে এমডি বলেন, দুর্ঘটনার পর সব পিলার ও বিয়ারিং প্যাড ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। ত্রুটি পাওয়া অংশগুলো পরামর্শকদের জানানো হয়েছে, এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে ত্রুটি থাকবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ফার্মগেট অংশের কাজের ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ সময়সীমা (ত্রুটি সারানোর মেয়াদ) জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে ডিএমটিসিএল তা গ্রহণ করেনি। কারণ এখনো অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে। এ জন্য ঠিকাদারকে সময়সীমা দুই বছর বাড়াতে বলা হয়েছে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ফারুক আহমেদ বলেন, ঢাকার মেট্রোরেল চার বছর আগে তাড়াহুড়ো করে চালু করা হয়েছিল। ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল রান) প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই সময় নেওয়া হয়নি।

তার মতে, কোনো মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে সব ঠিকাদার নিয়োগের পরও ছয় থেকে সাত বছর সময় লাগে, আর প্রাথমিক প্রস্তুতি ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে লাগে আরও তিন বছর।

ডিএমটিসিএল এমডি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা বাস্তবসম্মত নয়। আমি জানি না, এই লক্ষ্য কোন ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। আমাদের মেট্রোরেল প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে সক্ষম হয়। উন্নত প্রযুক্তি ও স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলকভাবে নতুন লাইন নির্মাণই এখন আমাদের লক্ষ্য।