বিএনপির প্রার্থী তালিকা: চমক আর অপেক্ষার খেলা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে এখনো ৬৩টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি, যা নিয়ে দলের ভেতরে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। সোমবার বিকেলে গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত তালিকার বাইরে থাকা ৬৩টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি ২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী পরে চূড়ান্ত করা হবে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে এই সংখ্যায় পরিবর্তন আসতে পারে।

প্রার্থী চূড়ান্ত করার এই প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ দীর্ঘ। তিনটি পৃথক জরিপের ফলাফলকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য—নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন—সারাদেশের ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে পর্যালোচনা করেন। এই পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রথমে ২৬০টি আসনের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সোমবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সেই তালিকা থেকে ২৩৭টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ এবং বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এবারের তালিকায় দলের বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এমনকি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামও তালিকায় নেই, যদিও তিনি এর আগে কখনো নির্বাচনে অংশ নেননি।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, এবার কোনো পরিবার থেকে দুজনকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, এবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরিবারের কোনো ছেলে-মেয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।’

এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি, তবে তারা তাদের পছন্দের আসনের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হলে শরিকদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে, যা দলীয় প্রার্থী তালিকাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।