আপনি পড়ছেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ‘পারস্পরিক শুল্ক’ তার ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার শুনানি গ্রহণ করবে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের (আইইইপিএ) অধীনে প্রেসিডেন্টকে দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে কি না, আদালত মূলত সেই প্রশ্নটিই পর্যালোচনা করবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প বাণিজ্য নীতি নির্ধারণে শুল্ককে একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। ফেনটানিল পাচার ও অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে তিনি কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করেন। এরপর ২ এপ্রিল তারিখটিকে ‘মুক্তি দিবস’ আখ্যা দিয়ে তিনি সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপের ঘোষণা দেন, যা ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তার এই ঘোষণায় বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

শুল্ক কার্যকরে কিছুটা দেরি হলেও যুক্তরাষ্ট্র পরে চীনসহ প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্কের হার চূড়ান্ত করে। জুলাই মাসের শেষে প্রায় ৭০টি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের হার ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়ায়। জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির প্রতি হুমকি দেখিয়ে ব্রাজিলের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারতের ওপর শুল্কও ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেন ট্রাম্প। এই শুল্কের আওতায় ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি, তামা, কাঠ ও আসবাবপত্রের মতো বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।

সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, নতুন এই শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে ১৯৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব জমা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৭৬ বিলিয়ন ডলারই এসেছে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

এর আগে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও অঙ্গরাজ্যের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে ইউএস কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিষয়টি পর্যালোচনা করে। গত ২৮ মে এই আদালত এক রায়ে ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ককে আইইইপিএ আইনের লঙ্ঘন এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করে তা স্থগিত করে দেয়। আদালত রায়ে জানায়, সংবিধান অনুযায়ী শুধু কংগ্রেসেরই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও কর আরোপের ক্ষমতা রয়েছে। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘এটা কি শুধুই “ট্রাম্প” বিদ্বেষ? এর আর কী কারণ থাকতে পারে।’

তবে পরে ইউএস কোর্ট অব আপিলস ফর দ্য ফেডারেল সার্কিট নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেয়। আপিল আদালত আগের রায় বহাল রাখলেও শুল্ক তাৎক্ষণিকভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত না দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ দেয়। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প প্রশাসনের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

শুল্কের বিরোধিতাকারীদের যুক্তি হলো, জরুরি পরিস্থিতিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইইইপিএ আইন প্রেসিডেন্টকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, তা ব্যবহার করে একতরফাভাবে বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করা সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, পারস্পরিক শুল্ক আরোপের বিষয়টি আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ।

আদালত যদি ট্রাম্পের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে, তবে ভবিষ্যতে শুল্ক আরোপের জন্য প্রেসিডেন্ট আইইইপিএ আইন ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি রায় ট্রাম্পের বিপক্ষে গেলে বর্তমান শুল্ক প্রত্যাহার করা এবং আদায় হওয়া রাজস্ব ফেরত দেওয়ার বিষয়েও নতুন মামলা হতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিলেও ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি খাতের ওপর অন্য আইনের অধীনে আরোপিত কিছু শুল্ক বহাল থাকবে। এছাড়া, অন্যায্য বাণিজ্য চর্চার অভিযোগে চীনের ওপর আরোপিত কিছু শুল্কও অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের সুযোগ কতটা থাকবে, তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। রায় বিপক্ষে গেলে ওয়াশিংটনের বাণিজ্য নীতিতে বড় ধরনের পুনর্গঠন হতে পারে।

এই মামলাকে ‘দেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ’ বলে অভিহিত করে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা যদি হেরে যাই, আমাদের দেশ প্রায় তৃতীয় বিশ্বের পর্যায়ে নেমে যেতে পারে—ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন যেন এমনটা না ঘটে।’

এর আগে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছিলেন, শুল্ক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে বিলম্ব হলে তা অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করবে এবং রাজস্ব ফেরত দিতে হলে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিলে শুল্ক নীতির জন্য প্রশাসনের বিকল্প পথ প্রস্তুত রয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেবে বলে আশাবাদী হলেও প্রশাসন একটি ‘বিকল্প পরিকল্পনা’ তৈরি করে রেখেছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.